স্টাফ রিপোর্টার: পুজোর মুখে কলকাতা হাই কোর্টে (Kolkata High Court) বড়সড় ধাক্কা খেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে, এমনকী তাঁকে ব্ল্যাকমেল করেও শুভেন্দুর বিপুল টাকা আদায়ের অভিযোগের পুলিশি তদন্ত কার্যত এড়িয়ে যাওয়ার আরজি খারিজ হয়ে গেল আদালতে। সারদাকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় এবং প্রকল্পের নামে টাকা নয়ছয় সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত কাঁথি থানার পুলিশ যেমন চালিয়ে যাচ্ছিল, তেমনই চালিয়ে যেতে পারবে বলে বুধবার জানিয়ে দিয়েছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। সারদাকাণ্ডের সিবিআই তদন্তের অছিলায় কাঁথি পুরসভা থেকে সারদার ফাইল ‘উধাও’-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা নয়ছয় ও সারদাকর্তার কাছ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর টাকা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য পুলিশের তদন্তে কোনও বাধা নেই বলেও সাফ জানিয়েছে আদালত।
উল্লেখ্য, শুভেন্দু ছাড়াও ওইসব অভিযোগে নিশানায় রয়েছেন শুভেন্দুর ভাই তথা কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীও। ফলে আদালতের ওই নির্দেশে পুজোর মুখে বিরোধী দলনেতার পাশাপাশি তাঁর ভাইও আপাতত ঘোর চাপের মুখে। প্রসঙ্গত, সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সারদার ফাইল ‘উধাও’ মামলার তদন্ত শুরু করে কাঁথি থানার পুলিশ। একই সঙ্গে, প্রকল্পের নামে টাকা নয়ছয় এবং সারদাকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগেও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করে কাঁথি থানার পুলিশ। এইসব অভিযোগের সঙ্গে মূল সারদা মামলার যোগ থাকার অছিলায় পুলিশি তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন জনৈক আইনজীবী অনিন্দ্য সুন্দর দাস। বুধবার সেই মামলার রায়েই ওই নির্দেশ জারি করে আদালত।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি: সাদা খাতা জমা দিয়েও প্রাপ্ত নম্বর ৫০-৫২! SSC-র নম্বর কারসাজিতে স্তম্ভিত বিচারপতি]
সম্প্রতি নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে এসে শুভেন্দু অধিকারীকে কাঠগড়ায় তুলে মুখ খোলেন সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে প্রিজনার্স পিটিশনে তিনি ওয়েলফেয়ার অফিসারের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কীভাবে, কত টাকা আদায় করেছেন, তার বিস্তারিত উল্লেখও করেন। বিধাননগরের এমপি-এমএলএ আদালতে হাজিরা দিতে এসেও ওই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সারদাকর্তা। হাই কোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে হেফাজতে নিয়ে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির তদন্ত করার দাবি তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের তরফে মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘সুদীপ্ত সেন যে কাঁথি পুরসভাকে ব্যাঙ্ক ড্রাফট দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলেছে। আর শুভেন্দু নিজে যথেষ্ট প্রভাবশালী। উনি শুধু বিরোধী দলনেতাই নন, আগাম বলে দেন কার বাড়িতে কবে সিবিআই তদন্ত করতে যাবে। উনি সাংসদ ছিলেন, এখন কেন্দ্রের শাসকদলের নেতা, তাই তদন্তে প্রভাব খাটাতেই পারেন। আমাদের একটাই দাবি, রাজ্য পুলিশ শুভেন্দুকে অবিলম্বে গ্রেফতার করলে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত চলবে।’’
সারদাকর্তার ওই বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে তাকে কিছুদিন আগে সংশোধনাগারে জেরাও করে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশের একটি দল। এদিন কাঁথি থানার আইসি অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি। তাই ওই বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলতে পারব না। তদন্ত চলছে। তবে কাঁথি পুরসভা থেকে ফাইল উধাও-সহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলায় আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাসের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই সারদা মামলার তদন্ত করছে, সেখানে রাজ্য পুলিশ কী করে সমান্তরাল তদন্ত করতে পারে?” পালটা রাজ্যের বক্তব্য ছিল, “এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মামলা। এর সঙ্গে সারদা মামলার কোনও যোগ নেই। এটি কাঁথি পুর এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের ফাইল উধাওয়ের বিষয়।” রাজ্যের আরও দাবি, “তৎকালীন সময়ে এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অনেক অনুদান দিয়েছেন সারদাকর্তা এবং পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে প্রিজনার্স পিটিশনে ওয়েলফেয়ার অফিসারের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কীভাবে, কত টাকা আদায় করেছেন, তার বিস্তারিত উল্লেখও করেন তিনি।”
[আরও পড়ুন: ৯ মাসের অপেক্ষার অবসান, বিপিন রাওয়াতের জায়গায় নতুন সেনা সর্বাধিনায়কের নাম ঘোষণা কেন্দ্রের]
এমনকী, সারদাকর্তাকে ব্ল্যাকমেল করেও অনেক টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও সারদাকর্তার দাবি বলে আদালতে জানায় রাজ্য। সেই মামলার শুনানি শেষ করে আগে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত। সম্প্রতি সারদাকর্তার বিস্ফোরক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই কাঁথি পুরসভা থেকে ফাইল উধাওয়ের ঘটনা জানাজানি হয়। জানা গিয়েছে়, ২০১১-’১২ সালে কাঁথি পুরসভা এলাকায় বেশ কিছু নির্মাণ করেছিলেন সুদীপ্ত। কিন্তু প্রকল্পগুলিতে বেশ কিছু বেনিয়ম হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। কাঁথি পুর এলাকায় ওই নির্মাণকাজের অনুমতি পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দেন সুদীপ্ত সেন। অভিযোগ, চার তলা নির্মাণের অনুমতি পেয়েও উনিশ তলা নির্মাণ করেছিলেন সারদাকর্তা এবং গোটাটাই হয়েছিল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। কিন্তু সারদাকর্তা কাকে, কত টাকা দিয়েছিলেন, সেই তথ্য-সহ বিতর্কিত নির্মাণ-সংক্রান্ত বেশ কিছু ফাইল কাঁথি পুরসভা থেকে চুরি যায়। বিষয়টি নিয়ে কাঁথি থানায় অভিযোগ জানান পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান।