নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বিজেপির পাখির চোখ বাংলা। একুশে নবান্ন দখলে মরিয়া তাঁরা। উদ্দেশ্যপূরণে বাঙালির ভাবাবেগকে হাতিয়ার করছে গেরুয়া শিবির। সে কথা মাথায় রেখেই নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে বিশেষ কমিটি গড়ল কেন্দ্রীয় সরকার। যার মাথায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই কমিটির সদস্য হচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার সরকারিভাবে এই কমিটির কথা জানানো হয়।
এদিন পিআইবির তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির শীর্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে আগামী এক বছর ধরে কলকাতা, দিল্লি, মণিপুর-সহ দেশ ও বিদেশে কোথায় কী অনুষ্ঠান হবে, আর কী কী পদক্ষেপ করা হবে তা এই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটির সদস্য দেশের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ-সহ জ্ঞানীগুনী ব্যক্তিরা। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যরাও এই কমিটির অংশ হবেন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বাংলায় এরকমই এক কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন : নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে কলকাতায় থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ বসু পরিবারের]
কেন্দ্রের উচ্চপর্যায়ের এই কমিটিতে মোট ৮৫ জন সদস্য রয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিটিতে রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেত্রী কাজল। কমিটির সদস্য করা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি-সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে।
নেতাজি জয়ন্তী পালনকে কেন্দ্র করে এবছর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ইতিমধ্যেই ‘প্রতিযোগিতার’ আবহ তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনই যে তার কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি বাঙালি ভাবাবেগকে ছুঁতে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী সাড়ম্বরে পালন করার কর্মসূচি নিয়েছে। আবার পালটা কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকারও দিনটিকে মহা আড়ম্বরে পালন করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কেন্দ্রের শাসক দলের থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে ২৩ জানুয়ারি দিনটিকে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি ঘোষণার জন্য আরজি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠিও দিয়েছে রাজ্য। বাংলার দীর্ঘদিনের এই দাবি কেন্দ্র কখনও মানেনি। এবার অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই এবার কেন্দ্রের মোদি সরকার সেই দাবি মেনে নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
[আরও পড়ুন : ‘দুই স্বদেশি টিকার মাধ্যমে মানবতার সেবায় তৈরি দেশ’, প্রবাসী ভারতীয়দের জানালেন মোদি]
এবার তো ২৩ জানুয়ারি বাংলায় আসছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এমনকী, রেড রোডে নেতাজির মূর্তিতেও মাল্যদান করতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বসু পরিবার। এবার রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমিটি গড়ল কেন্দ্রও। আর সেই কমিটির গুরুত্ব বাড়াতে মাথায় রাখা হল খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সদস্য হয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তী। সবমিলিয়ে নেতাজির জন্মজয়ন্তী নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানি তুঙ্গে।