অর্ণব আইচ: দুর্ঘটনায় পথচারীদের মৃত্যুর সংখ্যা কমছে শহরে। কমছে আহত পথচারীর সংখ্যাও। একই সঙ্গে ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর প্রবণতা রয়েছে বহু গাড়ির, এমন প্রমাণও মিলেছে। পথচারীদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে গাড়ি চালকরা। পরে আর তাদের সন্ধান মিলছে না। দেখা গিয়েছে, গত বছর শহরে যত সংখ্যক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে অজানা গাড়ির ধাক্কায়। সম্প্রতি বাইপাসের কাছে পার্ক সার্কাস কানেক্টরের উপর একটি ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর ঘটনা ঘটে।
[কড়ি ফেললেই মিলছে ভারতীয় পরিচয়, শহরে সক্রিয় আইএসআই চক্র]
পুলিশের মতে, পথদুর্ঘটনার একটি বড় অংশের ‘শিকার’ হন পথচারীরা। ট্রাফিক পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর কলকাতায় পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩২৯ জনের। তার মধ্যে ১৭১ জন পথচারী। মোট সংখ্যার ৫২.৮৮ শতাংশ। একইভাবে কমেছে আহত পথচারীদের সংখ্যাও। গত বছর মোট আহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৫৯। তাঁদের মধ্যে আহত পথচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৭৩ জন। মোট সংখ্যার ৪৫.৮৩ শতাংশ। পুলিশের মতে, গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০১৪ সালে শহরে মোট ২৩৩ জন পথচারীর মৃত্যু হয়। সেখানে ২০১৫ সালে মৃত্যু হয় ২১৮ জনের। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৯৬। গত বছর এই সংখ্যা আরও কমেছে। একইভাবে গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ক্রমে কমেছে আহতের সংখ্যাও।
ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের মতে, পথদুর্ঘটনায় পথচারীদের মৃত্যুর ঘটনায় যেমন গাড়ির দোষ রয়েছে, তেমনই রয়েছে পথচারীদের দোষও। দুর্ঘটনার পর সিসিটিভি পরীক্ষা করে বহুবার দেখা গিয়েছে যে, যেভাবে পথচারীরা নিয়ম না মেনে রাস্তা পার হন, তাতে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যদিও রাজ্য সরকার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু করার পর একসঙ্গে গাড়ির চালক ও পথচারীদের সচেতন করা শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে হোর্ডিং। এ ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তৈরি হয়েছে ‘গেট’। তা ছাড়াও ট্রাফিক কর্মীরা উপস্থিত থেকে রাস্তা পার হতে দেন না। নিয়ম না মেনে অথবা মোবাইল ফোন কানে নিয়ে রাস্তা পার হলে বহু পথচারীর কাছ থেকেও জরিমানা নেওয়া হয়। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য জোর দেওয়া হয়। ট্রাফিক কর্তাদের ধারণা, কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে শহরের মানুষ রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তাই ক্রমে কমে গিয়েছে পথচারীদের মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা।
[বেহালা কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী]
এদিকে, পুলিশের অন্য একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ‘হিট অ্যান্ড রান’-এ মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৮ জন পথচারীর। পালানোর পর গাড়িগুলির সন্ধান মেলেনি। পুলিশের মতে, এর একটি বড় অংশ মালবাহী গাড়ি। মালবাহী গাড়িগুলি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সহজেই রাজ্যের বাইরে পালিয়ে যায়। আবার অনেক সময় ধরা পড়ার ভয়েই পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে পালায় গাড়ি। তাই হিট অ্যান্ড রান’-এর ঘটনায় রাশ টানতে সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়াও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। মিনিবাসের ধাক্কায় মারা যান ১২ জন। মালবাহী গাড়ির ধাক্কায় ৩২ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। সেখানে বেসরকারি গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন ২৩ জন পথচারী। বাইক ও স্কুটারের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। ট্যাক্সির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের ও অটোর ধাক্কায় মারা গিয়েছেন পাঁচজন পথচারী। এবার পথচারীদের মৃত্যুতে রাশ টানতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘স্ট্র্যাটেজি’ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
The post ‘অজানা গাড়ি’র ধাক্কায় শহরে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা appeared first on Sangbad Pratidin.