ছাত্রমৃত্যু, ছাত্রের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এ নিয়ে অনবরত চলছে রাজনীতি৷ তৈরি হয়েছে ইস্যু৷ কিন্তু দিনের শেষে এদের কথা মনে রাখেন কেউ? জানতে চায় কেউ, কেমন আছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা? উত্তর খুঁজলেন উর্মি খাসনবিশ৷
সময়টা জানুয়ারি! বছরের গোড়াতেই ঘটনাটা ঘটল৷ হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণারত ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করলেন৷ শেষ চিঠিতে লেখা ছিল তিনি যে ‘শূন্যতা’ জীবনে অনুভব করেছেন, তা আগে কখনও অনুভব করেননি৷ আর এই মনের অবস্থা নিয়ে বেঁচে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ আর তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন রোহিত৷ এরপর তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে বহু রাজনৈতিক ঝড়ঝাপটার সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ৷ রোহিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হয়েছে বহু আন্দোলন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন বহু ছাত্র-ছাত্রী৷ রোহিতের মৃত্যু বৃথা যাবে না, এমন কথাও বলা হয়েছিল বহু ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু এরপর সময় গড়িয়ে গিয়েছে আপন তালে৷ সংবাদপত্র, খবরের চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটগুলিতে রোহিতের মৃত্যুর খবরের গুরুত্ব কমতে কমতে এক সময় হারিয়ে গেলেন রোহিত ভেমুলা৷ আমরাও ভুলে গেলাম রোহিতকে৷ রোহিতের বদলে মনে রয়ে গেল এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্ব, যাঁরা হয়ে উঠলেন আন্দোলেনর মুখ৷ মিডিয়ায় বাইট এবং ফেসবুকের স্টেটাসের হাত ধরে তাঁরা হয়ে উঠলেন আগামী প্রজন্মের আইকন৷ আর রোহিত? রোহিতের পরিবার? তাঁদের খোঁজ নেওয়া এখন আর তেমন জরুরি কি?
কেমন আছেন রোহিতের পরিবার? তাঁরা দু’বেলা ভাল করে খেতে পান? রোহিতের মা’র শরীর ঠিক আছে? আমরা জানিনা৷ আর সত্যি কথা বলতে কী আমরা জানতেও হয়তো চাইনা৷
সাম্প্রতিক সময়ের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র নাজিব আহমেদের কথাই ভাবুন৷ গত ১৫ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ তিনি৷ বেশ কিছু বাম ছাত্র সংগঠনের দাবি, গত ১৪ অক্টোবর নাজিবের সঙ্গে নাকি এবিভিপি’র ছাত্রদের বচসা বেধেছিল৷ তাঁরা নকি নাজিবকে হুমকি দিয়েছিলেন৷ আর ঠিক তার পর দিন থেকেই গায়েব নাজিব৷ আর নাজিবের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনীতি৷ একদিকে আম আদমি পার্টি বিজেপির দিকে দোষারোপ করছে আর অন্যদিকে বিজেপি’র তরফ থেকে নাজিবকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে৷ আর এরই মধ্যে জেএনইউ ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে আন্দোলন৷ যদিও নাজিব বিশেষ তেমন মিডিয়ার অ্যাটেনশন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ একে তো তাঁর পদবি আহমেদ৷ আর দ্বিতীয়ত তিনি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা দেশবিরোধী গন্ধ পাওয়ার সম্ভাবনা উপেক্ষা করছেন না কেউই৷ আর তাই হয়তো নাজিবকে আর যাই হোক সোজা সরল নিখোঁজ ছাত্রর চোখে দেখছেন না কেউই! তাই বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে আন্দোলন হলেও কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন নাজিব আহমেদ৷ নাজিবের রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তা কী? নাজিব কোন জাতির বা নাজিব কেন বিজেপি বিরোধী তা নিয়ে প্রশ্ন করার ইচ্ছে এই মুহূর্তে নেই৷ কেবল হারিয়ে যাওয়া ছেলের পোস্টার হাতে কাঁদতে থাকা এক মায়ের মুখ দেখে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে পারিনি৷ নাজিবকে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, নাজিব আদৌ বেঁচে আছেন কিনা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে সাময়িকভাবে সচেতনতা রয়েছে মানুষের৷ কিন্তু সেটা কতদিন? আর কিছুদিন পরেই হয়তো রোহিতের মতো নাজিবও হারিয়ে যাবে৷
রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মনে হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অতিরিক্ত মাত্রায় রাজনীতি করলে এমন ফলই ভুগতে হবে৷ কিংবা মনে হতে পারে দেশবিরোধী তকমাযুক্ত জেএনইউ-এর ছাত্র পেয়ে গিয়েছেন উচিতশিক্ষা৷ কিন্তু নাজিব কারও বাড়ির ছেলে৷ কারও ভাই, কারও বন্ধু৷ তাঁর হারিয়ে যাওয়া কিংবা ফিরে আসা হয়তো ক্ষণিকের টিআরপি বাড়াতে পারে, হয়তো নতুন গুটিকয়েক ছাত্রনেতার জন্ম দিতে পারে এবং রাজনৈতিক কোন্দল বাড়িয়ে তুলতে পারে৷ কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি তাঁর পরিবারে যে চিরন্তন প্রভাব ফেলবে সেকথা হয়ত মনে রাখব না আমরা৷ ঠিক যেমন করে ভুলে গিয়েছি রোহিত ভেমুলার পরিবারকে! তেমন করেই৷
তাই যে কোনও বিষয় নিয়ে ইস্যু তৈরি করার আগে মনে হয় আর একটু তলিয়ে ভাবা উচিত প্রত্যেকের৷ রাজনীতি করার ক্ষেত্রেও ভাবনায় শান দেওয়া উচিত৷ কেবল নিজের কথা ভেবে নয়৷ নিজের পরিবারের মানুষগুলোর কথা ভেবেও একটু বিবেচনা করা উচিত বিষয়গুলি সম্পর্কে৷ কারণ নিজেদের ফায়দা বুঝে বাকি সবাই সরে যাবে একে একে৷ কেবল পরিবারগুলিতেই থেকে যাবে হাহাকার! তাঁরাই কেবল প্রশ্ন করবে ‘রোহিত, নাজিব ভাল আছ?’
The post নাজিব, রোহিত ভাল আছ? appeared first on Sangbad Pratidin.