সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আদিপুরুষ’ (Adipurush) ছবির প্রথম ঝলক উসকে দিয়েছে বিতর্ক। রাবণ (Ravan) অবতারে সইফ আলি খানকে দেখে ক্ষিপ্ত অনেকেই। সেই দলে কেবল আমজনতাই নেই। রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত থেকে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী, সকলেরই মত রাবণকে কিছুতেই পৌরাণিক চরিত্র বলে মনে হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, রাবণ যেন কোনও মুঘল শাসক! সব মিলিয়ে বিতর্ক একেবারে তুঙ্গে। কিন্তু মহাকাব্যে বর্ণিত রাবণ কেমন ছিলেন? স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্কের মধ্যে এই প্রসঙ্গও উঠে পড়েছে।
এপ্রসঙ্গে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত অধ্যাপক বিভা দুবে জানাচ্ছেন, ‘রামায়ণ’-এ রাবণকে ‘কাজলের পর্বত’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি ছিলেন কৃষ্ণবর্ণের এবং অতিকায় রোমশ চেহারার। সেই সঙ্গে মানানসই দীর্ঘ, ঘন কেশরাশি। তাঁর মাথায় জ্বলজ্বল করত উজ্জ্বল সোনালি মুকুট। তুলসিদাসের ‘রামচরিতমানসে’ অঙ্গদের মুখনিঃসৃত বর্ণনায় আমরা রাবণকে এভাবেই পাই। আবার বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রাজেশ শ্রীবাস্তব জানাচ্ছেন, শিবভক্ত রাবণের কপালে ছিল ত্রিপুণ্ডক তিলক। কানে ছিল কুণ্ডল। পরনে হালকা রঙের পোশাক। শরীর ছিল নানাবিধ অলঙ্কারে সজ্জিত।
[আরও পড়ুন: নরখাদক বাঘের তাণ্ডবে বিহারে ৮ জনের মৃত্যু! দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ বন দপ্তরের]
এবার দেখা যাক উপেন্দ্রকিশোরের বর্ণনায় রাবণ কেমন। তিনি লিখছেন, ‘রাবণের দশটা মাথা আর কুড়িটা হাত ছিল। দাঁতগুলি ছিল থামের মতো বড়-বড়। চুলগুলি আগুনের শিখার মতো লাল আর শরীরটা কালো পর্বতের মতো বিশাল।’ একই ভাবে কৃত্তিবাস ওঝার বর্ণনায় রয়েছে, ‘দশমুখ মেলিয়া রাবণ রাজা হাসে। কেতকী কুসুম যেন ফোটে ভাদ্রমাসে।’ বোঝাই যায়, মহাকাব্যের রাবণ রাক্ষস হলেও তাঁর চেহারা ছিল তেজোদ্দীপ্ত।
আসলে রাবণ ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ। অনেকেই ভাবতে পারেন, রাবণ কী করে ব্রাহ্মণ হলেন? রাবণের বাবা বিশ্রবা মুনি ছিলেন ব্রাহ্মণ। তাই রাক্ষসী কৈকসীর পুত্র হলেও রাবণ ব্রাহ্মণ। এখানেই শেষ নয়, শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন তিনি। সংস্কৃতজ্ঞ, সুপণ্ডিত এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী করা রাবণকে তাই একজন উচ্চশ্রেণীয় ব্রাহ্মণ হিসেবেই ধরা হত। তাই তাঁর চেহারায় রূপকথায় রাক্ষসের যে বর্ণনা, তা খুঁজতে গেলে চলবে না। আবার ‘আদিপুরুষ’ ছবির রাবণের মধ্যে কেবলই প্রতিহিংসা আর ক্রূরতার যে চিহ্ন তাও রাবণের সঙ্গে মেলে না। তিনি ছিলেন একাধারে রাক্ষস, অন্যদিকে পণ্ডিত। দুইয়ের সমাহার না হলে রাবণকে পুরোপুরি ফোটানো যায় না বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।