আমেদাবাদে বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান মহারণের আগে পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক শোয়েব মালিকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ক্রীড়া সাংবাদিক
বোরিয়া মজুমদার ও রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হল ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে দু’দলের কোনও ক্রিকেটারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কতটা চাপ অনুভব করছেন? উত্তর আসে, কোনও চাপ নেই, এটাকেও টুর্নামেন্টের আরও একটা ম্যাচ হিসাবে দেখছি। কথাটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
শোয়েব: দেখুন, স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের একটা আলাদা প্রেসার আছে। সেই চাপটা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। চাপমুক্ত হতে আমি ম্যাচের আগে ক্রিকেট থেকে নিজেকে পুরো অফ করে নিতাম। গান শুনতাম, মুভি দেখতাম। এমনকী এমন সব মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, যাদের ক্রিকেট নিয়ে বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই। তবে প্রত্যেকের আলাদা প্রস্তুতির পন্থা আছে, বিশেষ করে ভারত-পাক ম্যাচের আগে। কে কীভাবে চাপ সামলাচ্ছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শেষে জয়টাই শেষ কথা।
ক্রিকেট কেরিয়ারে অনেক ভারত-পাকিস্তান ডুয়েলের সাক্ষী আপনি। বিশ্বের বাকি সব লড়াইয়ের চেয়ে কোথায় আলাদা বলুন তো ম্যাচটা?
শোয়েব: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আসলে একটা অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। শুধুমাত্র দু’দেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ এই ম্যাচটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। সে বিশ্বের যে প্রান্তেই ম্যাচটা হোক না কেন। তবে দু’দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে হাসিঠাট্টা, মজা অনেককিছু চলে। আসলে অমিলের চেয়ে আমাদের মধ্যে মিলটাই বেশি। আমরা একই ধরনের খাবার খাই, প্রায় একই ভাষায় কথা বলি। ফলে বাইরে যা কিছু হোক, ক্রিকেটারদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে না। এশিয়া কাপে বুমরার সদ্যজাত সন্তানের জন্য উপহার নিয়ে গিয়েছিল শাহিন। এটাই দু’দেশের আসল ছবি।
এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে শাহিন শাহ আফ্রিদি দারুণ বল করেছিলেন। পরের ম্যাচটায় ভারত আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দারুণ একটা জয় পায়। আমেদাবাদে কী হতে পারে বলে মনে হচ্ছে?
শোয়েব : দেখুন, ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে আগাম কিছু বলা যায় না। দু’দলই শূন্য থেকে শুরু করবে ম্যাচটা। ম্যাচের দিন যারা ভালো খেলবে, তারা জিতবে। তবে বলতে পারি, চাপ বেশি থাকবে ভারতের উপর। কারণ রোহিত শর্মারা ঘরের মাঠে খেলছে। এশিয়া কাপে তাই কী হয়েছে ভুলে যান। বিশ্বকাপ অন্য লড়াই, আলাদা মঞ্চ।
বাবর আজমকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। ব্যাটার ও অধিনায়ক হিসাবে কতটা ছাপ বাবর ফেলতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
শোয়েব : আমি খেয়াল করে দেখেছি, বহু মানুষ বাবরের ব্যাটিং আর ক্যাপ্টেন্সিকে এক পংক্তিতে বসিয়ে বিচার করেন। একদম ভুল করেন তারা। লিডারশিপ একটা অন্য ব্যাপার। ব্যাটার হিসাবে বাবর প্রচণ্ড ধারাবাহিক। কিন্তু নেতৃত্বের বিচারে ওর আরও অনেককিছু শেখার আছে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। নেতৃত্বের চাপ বাবরের ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলে না। তবে একটাই পরামর্শ, বাবর প্রথম একাদশে অতিরিক্ত ব্যাটার খেলাও। এই পাকিস্তান বড্ড বেশি বাবর, রিজওয়ান আর ইমাম নির্ভর। আমি বলব, মিডল অর্ডারে সলমন আলি আগাকে খেলানো উচিত।
নাসিম শাহের না থাকা কতটা ধাক্কা?
শোয়েব : বিশাল ফ্যাক্টর। নতুন বলে নাসিম ভয়ঙ্কর। মিডল এবং ডেথ ওভারেও ও উইকেট তুলতে পারে। এমন প্লেয়ারের না থাকা অবশ্যই বড় ধাক্কা।
রোহিত শর্মা? দশ বছর হল ভারত কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি। রোহিত সেই খরা কাটাতে পারবেন?
শোয়েব: কিছু মনে করবেন না। অধিনায়ক হিসাবে রোহিতকে আমার খুব আবেগপ্রবণ বলে মনে হয়। ২২ গজের লড়ইয়ে একজন ক্রিকেটার কিংবা অধিনায়ককে এতটা আবেগপ্রবণ হলে চলে না। রোহিতকে বলব, আবেগে রাশ টানো। বিশ্বকাপ একটা লম্বা টুর্নামেন্ট। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে অনেক ধাপ পেরোতে হয়। ফলে বিশ্বকাপের শুরুতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন রোহিতের মাথায় গেঁথে গেলে মুশকিল। রোহিতকে খেয়াল রাখতে হবে, নেতৃত্ব যেন ওকে গিলে না ফেলে। তবে ব্যাটার রোহিতের আমি ভক্ত। যেদিন ও খেলবে, বাকিদের আর করণীয় কিছু নেই। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের উচিত ওকে গাইড করা।
আর বিরাট কোহলি?
শোয়েব : বিরাট আমার কাছে ফোর হুইলারের মতো। যেকোনও পরিস্থিতিতে মানানসই। যেকোনও পরিস্থিতিতে ও দলের শ্রেষ্ঠ পরিত্রাতা। ওর ব্যাটিংয়ের আমি গুণমুগ্ধ। আমরা ভাগ্যবান, যে বিরাটের খেলা চাক্ষুষ করতে পারছি। কোহলির সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট কী জানেন? আত্মনির্ভরতা। নিজের খেলা সম্পর্কে ওর ধারণা খুব স্পষ্ট। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে। আর খুব ভালো করে জানে কীভাবে ম্যাচ ফিনিশ করতে হয়। ওর মতো প্লেয়ারকে দলে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। ভারতের বিরুদ্ধে জিততে গেলে বিরাটকে আটকাতেই হবে বাবরকে।
জসপ্রীত বুমরাও ফর্মে রয়েছেন…
শোয়েব : আমি বলব বুদ্ধি করে বিশ্বকাপে বুমরাকে ব্যবহার করা উচিত ভারতীয় দলের। সব ম্যাচে ওর খেলার দরকার নেই। ক্লান্তি গ্রাস করলে কিন্তু বুমরার বলের গতিও কমবে। সেদিকে নজর রাখা দরকার।
বিশ্বকাপের শেষ চারে কোন কোন দলকে দেখছেন?
শোয়েব : এই মুহূর্তে সেটা বলা কঠিন। ভারত অবশ্যই ফেভারিট। পাশাপাশি পাকিস্তানকেও রাখব। ফাইনালে এই দুই দল উঠুক, সেটাই চাই।