দুলাল দে: স্পনসর হিসেবে এক বছরের জন্য আইএফএর (Indian Football Association) সঙ্গে ‘ইন স্পোর্টস’-এর চুক্তি ছিল ৮৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল, কলকাতা লিগ (Calcutta Football League) নিয়ে তিতিবিরক্ত, আইএফএ-র অপেশাদারী মনোভাবে ক্ষুব্ধ ‘ইন স্পোর্টস’ মাত্র ৫৪ লক্ষ টাকা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তির বাকি টাকা আর দেবে না। যা নিয়ে আইএফএর অন্দর মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে চাপান উতোর। যদিও আইএফএ সচিব (IFA) অনির্বাণ দত্ত ভাবলেশহীন ভাবে বলছেন, ‘চুক্তিমতোই টাকা দিয়েছে ইন স্পোর্টস।
অনেক কষ্ট, অনেক চেষ্টার পর বিদেশি সংস্থা ইন স্পোর্টস-কে কলকাতা লিগের (CFL) স্পনসর হিসেবে পেয়েছিল বাংলা ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আইএফএ। তার জন্য বিদেশি সংস্থাটি বার্ষিক ৮৪ লক্ষ টাকা দিতে চুক্তি করেছিল। কিন্তু কলকাতা লিগে বল গড়াতেই সম্পূর্ণ অন্য পরিস্থিতি। ম্যাচের পর ম্যাচ বাতিল। অনেক সময় এরকম হয়েছে, জেলায় ম্যাচ। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে তা জানা গিয়েছে। তার উপর লিগ কবে শেষ হবে, সেটাই আইএফএ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছিল না। যার ফলে বিশাল অঙ্কর চুক্তি করে সমস্যায় পড়ছিল ইন স্পোর্টস-ও।
[আরও পড়ুন: হারতেই পাক সমর্থকদের ট্রোল ভারতীয় দলকে! প্রতিবেশীদের উপর বেজায় চটলেন ইরফান পাঠান]
এর উপর সবচেয়ে যেটা তাদের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তা হল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)-মোহনবাগান (Mohun Bagan) ম্যাচ আয়োজন করতে গিয়ে আইএফএর চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া। ‘ইন স্পোর্টস’ আইএফএর সঙ্গে চুক্তির সময় সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচটি তাদের অ্যাপের মাধ্যমে সম্প্রচার করা নিয়ে। কিন্তু সেটা করতেও আইএফএ ব্যর্থ হওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে বিদেশি সংস্থাটি। এমনকী লিগ কবে শেষ হবে সে ব্যপারেও আইএফএ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা হচ্ছিল না। এর উপর শেষ মুহূর্তে প্রিমিয়ারের একাধিক ক্লাব ম্যাচ খেলতেই অস্বীকার করে। ম্যাচের পর ম্যাচ ওয়াকওভার হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে কলকাতা লিগ নিয়ে চরম হতাশা দেখা দেয় ‘ইন স্পোর্টস’-এর কর্তাদের মধ্যে। এরই ফলস্বরূপ আইএফএকে রীতিমতো ঝেড়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, কলকাতা লিগ থেকে চরম আর্থিক সম্মুখীন হয়েছে তারা। চুক্তিতে যেভাবে বলা ছিল, তা কিছুই ঠিক করে করতে পারেনি আইএফএ। ফলে চুক্তির শর্ত স্বরূপ ৮৪ লক্ষ টাকা না দিয়ে ৫৪ লক্ষ টাকা দিতে সম্মতি হয়েছে। আর এতেই চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে আইএফএ-ও।
কলকাতা লিগ ঠিক ভাবে করা যায়নি। মহামেডান স্পোর্টিং (Mohammedan Sporting) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অনেকদিন হয়ে গেল। প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি রোনাল্ডিনহো (Ronaldinho Gaucho) ধরার স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। অথচ চ্যাম্পিয়ন দল মহামেডানের ফুটবলাররা এখনও সেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ধরার স্বাদ পাননি। আইএফএর অন্যতম সহ সভাপতি সৌরভ পাল বলছিলেন, ‘চুক্তির সময় কী শর্ত রাখা হয়েছিল, আমরা কেউই জানতাম না। চুক্তি হল ৮৪ লক্ষ টাকার। অথছ মরশুম শেষে আইএফএ পাচ্ছে মাত্র ৫৪ লক্ষ টাকা! এই ইস্যুতে আইএফএর উচিত আইনী পদক্ষেপ নেওয়া। অথচ সবটাই কমন জানি ধামা চাপা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ আইএফএ সচিব অবশ্য ইনস্পোর্টস-এর কোনও দোষ দেখছেন না। বলছেন, ‘চুক্তির শর্তই ছিল, ওরা লাভবান না হলে পুরো টাকা দেবে না। সেইমতো টাকা কেটে নিয়েছে।’
এদিকে, ফুটবল ক্যালেন্ডার নিয়ে কিছুদিন আগে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত যেভাবে কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন ফেডারেশন সচিব সত্যনারায়ণকে, সেই ইস্যুতেও অনির্বাণকে সমর্থন করছেন না খোদ আইএফএরই অন্যতম সহ সভাপতি সৌরভ পাল। বলছিলেন, এই মুহূর্তে কোনও রাজ্য লিগেই আইএসএলের দলের ফুটবলাররা খেলতে পারেন না। সেই কারণেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান তাদের রিজার্ভ দল তৈরি করেছে। তাহলে ডুরান্ড অথবা আইএসএল চলাকালীন কলকাতা লিগের খেলা চললে কোনও দলেরই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফলে ফুটবল ক্যালেন্ডারে ফেডারেশন বাংলাকে লিগ করার জায়গা দিচ্ছে না বলে যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’