গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: এসএসকেএম হাসপাতালে রক্ত দিতে এসেছিলেন রাজু সর্দার। তাঁর টি-শার্টের গলার কাছ থেকে উঁকি দিচ্ছে সাপের ফণা। দেখেই শিউরে উঠলেন ব্লাড ব্যাংকের কর্মী। “ও কী? ট্যাটু করিয়েছেন, কবে?” “সপ্তাহ দুয়েক আগেই।” রাজুর উত্তর শুনেই তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় করেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের কর্মীরা। বুধবারের এ ঘটনায় হতবাক রাজু। জানতেনই না ট্যাটু করলে রক্তদান ‘নিষিদ্ধ’। যদিও এমন প্রত্যাখ্যান শুনতে হয়নি বারুইপুরের গৌরাঙ্গকে। তাঁর গোটা পা জুড়েই ট্যাটু। কিন্তু ঢাকা থাকায় তা চোখেই পড়েনি কারও! দিব্যি রক্ত দিয়ে এসেছেন। আড়ালে থাকা এই ট্যাটু কিন্তু ভয়ের কারণ। যিনি এই রক্ত নিয়েছেন অদূর ভবিষ্যতে এডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি-এর মতো মারণরোগ বাসা বাঁধতে পারে তাঁর শরীরে।এমনটাই জানাচ্ছেন শহরের বিশেষজ্ঞরা।
[ক্যাম্পাসে বেহুঁশ অবস্থায় উদ্ধার মদ্যপ ছাত্রী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শোরগোল]
কিন্তু, ভয়টা কোথায়? শহরে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়িয়ে ওঠেছে ট্যাটু পার্লার। হাতে,পায়ে, পিঠে হরেক ছবি আঁকাতে সেখানে লম্বা লাইন। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “শহরের অনেক জায়গায় অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্যাটু করানো হয়। সুচের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি, সি এবং এইচআইভি বাহিত হতে পারে। স্যালুনে দাড়ি কাটতে গিয়ে এডস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। তবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ট্যাটু করানো হলে রক্তদানে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” শরীরে ট্যাটু আঁকার জন্য সুচে বিশেষ কালি ভরে তা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রোমকূপে। তাতে শরীর থেকে কিছুটা রক্তও বেরোয়। স্রেফ ভালবাসার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে সে ব্যথা সহ্য করে নেন ট্যাটুপ্রেমীরা। কিন্তু সে সুচ যদি অন্য কারও শরীরে এর আগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সেই ব্যক্তির যদি কোনও অসুখ থাকে, তবে রক্তের মাধ্যমে তা প্রবাহিত হতে পারে অন্য ব্যক্তির দেহেও। যদিও নামজাদা ট্যাটু পার্লারগুলোর দাবি, এক সুচ দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। ধর্মতলা অঞ্চলের ট্যাটু শিল্পী কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস জানিয়েছেন, “আমার কাছে অনেক চিকিৎসক ট্যাটু করাতে আসেন। অবৈজ্ঞানিক হলে তারা আসতেন না। ট্যাটু আঁকাতে একদম সিল-প্যাক সুচ ব্যবহার করা হয়। ক্লায়েন্টের সামনেই সেই প্যাকেট খোলা হয়। একবার যে কালি ব্যবহার করা হয়, তা আর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না।” কিন্তু সত্যিই যদি ট্যাটু শিল্পীরা একই সুচ দিয়ে একের পর এক ট্যাটু করতে থাকেন? তাতে নজরদারি চালাবে কে? যদি কেউ অপরিষ্কার সুচ দিয়ে ট্যাটু করে থাকেন, তার দায়ই বা কার? উত্তর জানা নেই কারও।
[ বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী ভাসাচ্ছে নৌসেনা]
The post গলায় ‘সাপের ফণা’, যুবকের রক্ত নিতে অস্বীকার এসএসকেএম-র appeared first on Sangbad Pratidin.