সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি। পার্লে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে শেষবার তাঁকে একদিনের ম্যাচ খেলতে দেখা গিয়েছিল। টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য হলেও, ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ব্রাত্যই ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। এহেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার অলরাউন্ডার এবার অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলবেন। এবং বিশ্বকাপের (ICC ODI World Cup 2023) কথা মাথায় রেখেই যে অশ্বিনের কামব্যাক হল সেটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। প্যাট কামিন্সদের (Pat Cummins) বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। যদিও ভারতের প্রাক্তন লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র (Amit Mishra) মনে করেন, অজিদের বিরুদ্ধে সিরিজের পর কাপ যুদ্ধে সাফল্য পেতে হলে অশ্বিনকে ফিল্ডিংয়ে অনেক উন্নতি করতে হবে।
অমিত মিশ্র বলেন, “অশ্বিন দুরন্ত বোলার। পাশাপাশি সবসময় উইকেট নেওয়ার জন্য ভাবনাচিন্তা করে। তবে মনে রাখতে হবে ৫০ ও ২০ ওভারের ফরম্যাটে সাফল্য পেতে হলে শুধু দারুণ বোলিং করলেই চলবে না। সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও দাপট দেখাতে হবে।” একইসঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, “অক্ষর প্যাটেল চোট পেয়েছে বলেই কিন্তু অশ্বিনকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজের দলে রাখা হয়েছে। ওর মধ্যে যে কোনও সময় উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা আছে। দারুণ অফ স্পিন করে বলেই অশ্বিন আবার সুযোগ পেল। তবে মনে রাখতে হবে ইতিমধ্যেই দলে রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের মতো বাঁহাতি ম্যাচ উইনার বোলার আছে।”
[আরও পড়ুন: কেকেআরে ফের শুরু গম্ভীর-যুগ! শাহরুখের সঙ্গে ক্রিকেটারের ছবি নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা]
১১৩টি একদিনের ম্যাচে ১৫১টি উইকেট নেওয়া অশ্বিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কারও সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক যে ২০১৭ থেকে ২০২২, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে মাত্র দুটি একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন অশ্বিন। যদিও রোহিত শর্মা মনে করেন অশ্বিনের অভিজ্ঞতা ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাতে সাহায্য করতে পারে। আর তাই অজিদের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে তিনি নামতে চলেছেন।
১৫ জনের দলে নির্বাচনের সময় সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রোহিত এবং মুখ্য জাতীয় নির্বাচক অজিত আগরকর। সেখানে স্বভাবতই অশ্বিনের কামব্যাক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। জবাবে রোহিত বলেছিলেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অশ্বিনের অভিজ্ঞতা অপরিসীম। ৯৪টি টেস্টের সঙ্গে ১১৩টি একদিনের ম্যাচ খেলে ফেলেছে। সেটা ভেবেই অশ্বিনকে ফিরিয়ে আনা হল। ও মাঠে থাকলে যে কোনও অধিনায়ক চিন্তামুক্ত থাকে। সবকিছু ভেবেই ওকে ফের সুযোগ দেওয়া হল।”
বিশ্বকাপের প্রাথমিক ১৫ জনের দলে নেই অশ্বিন। তবে তিনি যে কামব্যাক করতে পারেন সেই ইঙ্গিত এশিয়া কাপ জিতেই দিয়েছিলেন রোহিত। অবশ্য অক্ষরের চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়াও একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের আগে চিন্তা বাড়াচ্ছে জাদেজার স্ট্রাইক রেট, বলছেন প্রাক্তন ওপেনার]
এশিয়ার সেরা হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে রোহিত বলেছিলেন, “ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। একজন ভালো স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার দরকার। অনেকেই আমাদের ভাবনাচিন্তায় আছে। সত্যি বলতে গত কয়েক দিন অশ্বিনের সঙ্গে ফোনে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। অশ্বিনের মতো ওয়াসিও (পড়ুন ওয়াসিংটন সুন্দর) আমাদের তালিকায় আছে। আসলে আমরা এমন একজনের খোঁজে আছি যে বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটেও দলকে সাহায্য করবে।” ফলে অক্ষরের চোট যে বেশ বড়, এবং টিম ম্যানেজমেন্ট কাপ যুদ্ধের আগে আর নতুন কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়, সেটা রোহিতের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
এদিকে কয়েক দিন আগে নিজের ইউ টিউব চ্যানেলে অশ্বিন স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন, দল ডাকলেই তিনি বিশ্বকাপ অভিযানে নেমে যাবেন। তাই ক্লাব ক্রিকেট খেলাড় পাশাপাশি ইদানীং বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রস্তুত করছেন। সেই ছবি আবার টুইটারেও পোস্ট করেছিলেন অভিজ্ঞ স্পিনার। শেষ পর্যন্ত যদি অক্ষর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান, তাহলে অশ্বিন ও সুন্দরের মধ্যে কে সুযোগ পাবেন? রোহিত ও রাহুল দ্রাবিড় জুটি অভিজ্ঞতা নাকি তারুণ্যকে মূল্য দেবেন। ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৫ জনের দলে বদল আনা যাবে। এখন কে শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করবেন সেটাই দেখার।
প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডের জন্য ঘোষিত দল– লোকেশ রাহুল (অধিনায়ক/উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা (সহ অধিনায়ক), রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শুভমান গিল, শ্রেয়স আইয়ার, সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, ঈশান কিষান (উইকেটকিপার), শার্দূল ঠাকুর, ওয়াশিংটন সুন্দর, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জশপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা।
তৃতীয় ওয়ানডের দল– রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), হার্দিক পাণ্ডিয়া (সহ অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার, সূর্য কুমার যাদব, লোকেশ রাহুল, ঈশান কিষান (উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দূল ঠাকুর, অক্ষর প্যাটেল*, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জশপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ।