অস্ট্রেলিয়া: ২০৮/৩ (জস ইংলিশ ১১০, স্টিভ স্মিথ ৫২, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ১/৫০)
ভারত: ২০৯/৮ (সূর্য ৮০, ঈশান ৫৮, রিঙ্কু ২২*, তনবীর সঙ্ঘা ২/৪৭)
ভারত দুই উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপের ফাইনালে হার কোনও জয় দিয়ে মাপা সম্ভব নয়। তবে জয় তো সবসময় সুখের। আর সেটা যদিও অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে তাহলে তো ব্যাপারটা দারুণ হয়ে যায়। সূর্য কুমার যাদবের (Suryakumar Yadav) বিস্ফোরক ৪২ বলে ৮০ রানের দাপটে অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া (Team India) ২ উইকেটে হারিয়ে দিল।
জলে গেল জস ইংলিশের (Jos Inglis) দাপুটে ১১০ রানের ইনিংস। একইসঙ্গে এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জয়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে বড় রান চেজ করে জিতল ভারত। সেইজন্য অবশ্য রিঙ্কু সিং-এর (Rinku Singh) আলাদা প্রশংসা প্রাপ্য। কারণ প্রবল চাপের মুখে শেষ ওভারে ভারতের তিনজন আউট হলেও, রিঙ্কু ছক্কা মেরে জিতিয়ে দেন (যদিও সেটা ছক্কা হিসাবে ধার্য করা হয়নি। কারণ শিন অ্যাবট সেই বলটা ওভার স্টেপ নো বল করেছিলেন)। রিঙ্কু অপরাজিত থাকেন ২২ রানে। ফলে ৮ উইকেটে ২০৯ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় টিম ইন্ডিয়া।
বিশ্বকাপটা একেবারেই ভালো যায়নি। ৭ ম্যাচে রান মাত্র ১০৬। গড় ১৭,৬৬! সূর্য স্বভাবতই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এবং সেটাই স্বাভাবিক। কারণ কাপযুদ্ধের ফাইনালেও যে সূর্য অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে মাত্র চারদিন যেতেই একেবারে বদলে গেলেন সেই ‘স্কাই’! কারণ ফরম্যাট যে আর ৫০ ওভারের নয়! ২০ ওভারের। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’। ঠিক তেমনভাবেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সূর্য। সেই ধারাবাহিকতা এবার বজায় রাখলেন টিম ইন্ডিয়ার এই ফরম্যাটের নতুন অধিনায়ক। করলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৬তম অর্ধশতরান।
কিন্তু বাকিরা ধৈর্য দেখাতে পারলে চিত্রটা অন্যরকম হতেই পারত। যশস্বী জসওয়ালের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। মুম্বইকর যশস্বীর ভুলে রান আউট হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন রুতুরাজ। তাও আবার কোনও বল না খেলেই! সতীর্থকে রান আউট করালেও, নিজে বড় ইনিংস গড়তে পারলেন না যশস্বী। ৮ বলে ২১ রানে আউট হন। ফলে ২২ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত।
সেখান থেকে তৃতীয় উইকেটে ঈশান কিষানকে সঙ্গে নিয়ে ১১২ রান যোগ করে দেন সূর্য। দুজনের মারমুখী মেজাজ দেখে মনে হচ্ছিল, এত বড় রান চেজ করে ভারতের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঠিক সেই সময় অহেতুক মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩৯ বলে ৫৮ রানে ফিরে যান ঈশান। কিছুক্ষণ পর উইকেট ছুড়ে দেন তিলক বর্মা। ১৫৪ রানে ভারতের ৪ উইকেট চলে যায়। তবে এতে সূর্যকে আটকে রাখা যায়নি। রিঙ্কু সিংকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ৪২ বলে ৮০ রানে তাঁকে থামতে হয়। তবে এতে জয় পেতে বেগ পেতে হয়নি। বাকি কাজটা সারেন রিঙ্কু সিং। ১৪ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি ব্যাটার। চাপের মুখে মারলেন ৪টি চার।
বিশ্বকাপের ফাইনালটা ঠিক যেখানে শেষ করা হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই যেন ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শুরু করেছিল ষষ্ঠবারের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া। এবার বোলারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিলেন জস ইংলিশ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মারমুখী মেজাজে প্রথম শতরানের জন্য আলাদাভাবে নজর কাড়লেন এই তরুণ। ২২০.০০ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে ৫০ বলে ১১০ রান করে আউট হন জস ইংলিশ। বিস্ফোরক ইনিংসে মারলেন ১১টি চার ও ৮টি ছক্কা। জস ইংলিশকে যোগ্য সঙ্গত করেন বহু যুদ্ধের নায়ক স্টিভ স্মিথ। এই দুই অজি ব্যাটারের দাপটে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৮ রান তুলে দেয় অস্ট্রেলিয়া। কারণ অক্ষর প্যাটেল থেকে রবি বিষ্ণোই। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা থেকে মুকেশ কুমার। কেউই সুবিধা করতে পারেননি।
এদিন টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন সূর্য। ৪.৪ ওভারের মাথায় ওপেনার ম্যাথু শর্টকে বোল্ড করে দেন লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণোই। ৩১ রানে ১ উইকেট হারিয়ে প্রথম ধাক্কা খায় অজিরা। স্টিভ স্মিথ শুরু থেকে চালিয়ে ব্যাট করলেও, জশ ইংলিশ ক্রিজে আসতেই প্রাক্তন অধিনায়ক একটা দিক আগলে রেখে খেলতে শুরু করেন।
তবে ইংলিশ শুরু থেকেই ছিলেন আগুনে মেজাজে। উইকেটের চারিদিকে মারতে শুরু করে দেন। এরইমধ্যে দুজন দ্বিতীয় উইকেটে তুলে দেন ১৩০ রান। যদিও স্মিথ অর্ধ শতরান পূরণ করতেই রান আউট হয়ে ফিরে যান। করেন ৪১ বলে ৫২ রান। মারলেন ৮টি চার। বাকিটা সময় জস ইংলিশের। ১৬.৪ ওভারের মাথায় ৪৭ বলে নিজের প্রথম শতরান সেরে ফেলেন তিনি। এর পর মারতে গিয়ে ১১০ রানে আউট হন অজি ব্যাটার। তাঁর উইকেট নেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। বকিটা সময় মার্কাস স্টোয়নিস ও স্টিভ ডেভিড শেষ পর্যন্ত ক্রিজে টিকে ছিলেন। ফলে অজিরা ৩ উইকেটে ২০৮ রান তুলে দেয়। সূর্যের উত্তাপের পরেও শেষ মুহূর্তে ম্যাচ রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে চলে গেলেও, চাপের মুখে রিঙ্কুর দাপটে জয়ের মুখ দেখল ভারত।