বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, মাদুরাই: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শাখা বিস্তারের বিরোধিতা না করে বামেদের উপর আক্রমণ জোরদার করেছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। সংগঠন বিস্তারে নিজেদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতে তৃণমূলের ঘাড়ে বন্দুক রেখে অজুহাত খাড়া করল বঙ্গ সিপিএম। তাই গত চারবছর বহু চেষ্টার পরও সংগঠনকে মজবুত করা সম্ভব হয়নি বলে পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে সাফ জানাল বাংলার কমরেডকুলের নেতারা। শুক্রবার রাত থেকে রাজ্য ধরে ধরে সংগঠনের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছেন প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, মানিক সরকাররা। রবিবার, পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে গঠন হবে সিপিএমের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি। তার আগেই পার্টির শীর্ষ কমিটিতে জায়গা করে নিতে বাংলা ও কেরলের প্রতিনিধিদের মধ্যে শুরু হয়েছে লবি, পালটা লবি।
চলতি বছরে সংঘ পরিবার পা রাখছে শতবর্ষে। তাই বাংলায় সংগঠন বিস্তারে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন মোহন ভাগবতরা। হাতেনাতে তার ফলও মিলেছে। গত কয়েক বছরে রাজ্যে হাজারের বেশি শাখা বিস্তার করেছে গেরুয়া শিবির। তার ঠিক উলটো চিত্র লাল শিবিরে। চার বছরে সংগঠনকে একচুলও এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ি বা আভাস রায় চৌধুরীরা। এ যেন সেই চার মাথার মোড়ে লালবাতিতে আটকে পার্টির গতি!
একসারিতে কেরল-বাংলার সিপিএম নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার সাংগাঠনিক রিপোর্টের উপর বাংলার পক্ষে বক্তা ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, দেবব্রত ঘোষ, প্রাক্তন বিধায়ক জাহানারা খান। কিন্তু তিনজনই রাজ্য নেতৃত্বের বেঁধে দেওয়া সুরে সংগঠনের দুর্বলতা কারণ ব্যাখ্যা করেন বলে সূত্রের খবর। তাঁরা জানান, শাসকদল রাজ্যে বিরোধী পরিসর দখলে গেরুয়া শিবিরকে পরোক্ষে সাহায্য করছে। দু’দলই ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটছে। পার্টির সংগঠন বিস্তারে ধর্মীয় মেরুকরণ মূল বাধা। এর মধ্যে নয়া প্রজন্মের ছাত্র-যুবরা বাম রাজনীতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তাঁদের একটা অংশকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলেও সিংহভাগই বাইরে থেকে গিয়েছে। বাইরের অংশকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে যে পার্টি নেতৃত্বের দুর্বলতা রয়েছে তাও স্বীকার করে নেন বক্তারা। সেলিম, সুজন ও শমীকদের সাংগাঠনিক ব্যর্থতা সামনে নিয়ে আসেন তাঁরা। পার্টির এই পরিস্থিতির মধ্যেও যে নেতৃত্ব গোষ্ঠীবাজিতে জর্জরিত, তা অবশ্য বেমালুম চেপে যান বঙ্গের বক্তারা!
এদিকে, রবিবার পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে গঠিত হবে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি। এবার পলিটব্যুরো থেকে বয়সের কারণে আটজনের বাদ যাওয়ার কথা। কিন্তু বিশেষ কারণ দেখিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে রেখে দেওয়া হতে পারে। বাকি সাতজনের মধ্যে কেরলের কেউ নেই। তাই পলিটব্যুরোতে নিজেদের সদস্য বাড়িয়ে নিতে সক্রিয় হয়েছে মালয়ালি লবি। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাকে জায়গা করে দিতে তৎপর বিজয়নরা। আবার বাংলায় সূর্যকান্ত মিশ্রর জায়গায় নিয়মানুযায়ী শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ কমিটিতে ঢুকতে নেতা ধরতে শুরু করেছেন আভাস রায়চৌধুরী, শমীক লাহিড়ি ও সুজন চক্রবর্তী। ত্রিপুরা থেকে একমাত্র সদস্য মানিক সরকারকে সরতেই হবে। তার জায়গায় বর্তমান রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি সময়ের অপেক্ষা।
রবিবার শেষ হবে মাদুরাইয়ের পার্টি কংগ্রেস। নিজস্ব চিত্র।
সূর্যকান্ত মিশ্র ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়বেন বাংলার রবীন দেব ও রেখা গোস্বামী। তাঁদের জায়গায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ছাড়াও দৌড়ে রয়েছেন পলাশ দাস, কল্লোল মজুমদার, তাপস সিনহা, জামির মোল্লা। উত্তরবঙ্গ থেকেই একজনকে জায়গা দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর।