কিংশুক প্রামাণিক, নয়াদিল্লি: রবিবার নীতি আয়োগের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। ঠিক তার আগেই শনিবার দিল্লি পৌঁছে ফেডারেল ফ্রন্ট চাঙ্গা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ধরনাকে হাতিয়ার করে কার্যত নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল রাজধানীতে। মমতার পাশে এসে দাঁড়ালেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডু, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী শুধু নয়, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নও। আর তাতেই বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলের জোট-মঞ্চে মমতার পাশে সিপিএমের প্রবীণ নেতার আসা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নয়া সমীকরণের জল্পনাই উসকে গেল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই রাজধানীতেই জোট উদ্যোগে কোথাও থাকল না কংগ্রেস। বরং, আলো টানল তরুণ, নতুন ও ছোট দলের নেতৃত্ব।
[প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী! পায়ে হেঁটে ‘দিল্লি চলো’ অভিযান ওড়িশার যুবকের]
নীতি আয়োগের বৈঠকে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে যোগ দিতে শনিবার থেকেই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আসতে শুরু করেন দিল্লিতে। আগে বৈঠকের দিন শনিবারই নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু এদিন ইদ থাকায় মমতার অনুরোধেই বৈঠক একদিন পিছিয়ে রবিবার হচ্ছে। কিন্তু সেই নীতি আয়োগের বৈঠক ছাপিয়েই জাতীয় রাজনৈতিক মহলের নজর থাকছে আঞ্চলিক দলগুলির জোটের দিকে।
উল্লেখ্য, এদিন কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ানে মমতার দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চন্দ্রবাবুর অনুরোধেই তিনি দুপুরের উড়ানে দিল্লি পৌঁছান। হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠকে বসেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। পরে বৈঠকে যোগ দেন কুমারস্বামী এবং বিজয়ন। চার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেই লেঃ গভর্নরের কার্যালয়ে কেজরিওয়ালের লাগাতার ধরনার প্রসঙ্গটি ওঠে। এদিন হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল কেজরিওয়ালের প্রতি সংহতি জানাতে চার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে ধরনাস্থলে দেখা করতে যাবেন। মূলত, মমতার উদ্যোগেই তাঁর সঙ্গে এদিন রাত ন’টায় সাক্ষাতের অনুমতি লেঃ গভর্নরকে চিঠি ফ্যাক্স করা হয়েছিল। সেই চিঠিতে চার মুখ্যমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু লেঃ গভর্নরের কার্যালয় থেকে ‘সাক্ষাতের সময় পেরিয়ে গিয়েছে’ জানিয়ে অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়ার পরেই তাঁরা ঠিক করেন কেজরিওয়ালের বাসভবনেই যাবেন এবং তাঁর স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে কথা বলবেন। সেই মতো রাত ন’টায় হায়দরাবাদ হাউস থেকে পর পর একসঙ্গে বেরোয় চার মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। রাজধানীতে বিরোধী দলের এমন রাজনৈতিক তৎপরতা বিরল। রাতে কেজরিওয়ালের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, নীতি আয়োগের বৈঠকের পর চা-চক্রে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাবেন সব মুখ্যমন্ত্রী একত্রিতভাবে। তিনি বলেন, যা হচ্ছে তা অগণতান্ত্রিক। যদি রাজধানী দিল্লিতেই এমনটা হয়ে থাকে তবে সারা দেশে কী হবে! সে কারণেই দ্রুত এর সমাধান হওয়া দরকার।
[ইদেও উত্তপ্ত উপত্যকা, ওয়াঘা বর্ডারে মিষ্টি বিতরণে বিরত থাকল ভারত-পাক]
তাৎপর্যপূর্ণ হল, নীতি আয়োগের বৈঠকের আগে আঞ্চলিক দলের জোট গঠনের তৎপরতা এবং সেখানে মমতার নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা। সেই জোট প্রক্রিয়ায় সিপিএমকে পাশে পাওয়া। এবং বিজেপি-বিরোধী জোটে কংগ্রেসের মতো বড় দলের অনুপস্থিতি। অথচ, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও বিজেপি-বিরোধী জোটের কথা বলছেন, এমনকী নিজে মুখেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথাও বলছেন। অথচ কংগ্রেসকে বাইরে রেখেই ছোট ও আঞ্চলিক দলগুলির দিল্লিতে তৎপরতা জাতীয় রাজনীতিতে নয়া সমীকরণেরই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।উল্লেখ্য, লেঃ গভর্নরের অনিল বাইজালের কার্যালয়ের প্রতীক্ষাকক্ষে মন্ত্রিসভার তিন সদস্যকে নিয়ে ধরনায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। শনিবার সেই ধরনা ছ’দিনে পড়ল। বৃহস্পতিবারই প্রথম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে দাবি করেন, দিল্লির নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পাওয়া উচিত। যাতে সাধারণ মানুষের এর কারণে কোনও ভোগান্তি না হয়, তার জন্য দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে কেন্দ্র সরকার ও লেঃ গভর্নরকে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি, বাম নেতারাও লেঃ গভর্নরের অ-সাংবিধানিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হন।
The post মমতা দিল্লি যেতেই নাটকীয় মোড় রাজনীতিতে, তৃণমূল নেত্রীর পাশে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.