সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ার বাসিন্দা আট বছরের শিশুকন্যা আসিফাকে গণধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং আসিফার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছেন। বলেছেন, ‘আসিফার কাছে আমরা ছোট হয়ে গেলাম। কিন্তু আসিফার সুবিচার চাই।’
ভিকে সিং-ই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যিনি ছোট্ট আসিফাকে নিয়ে সরব হলেন। তাঁরই সহকর্মী, আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং মাসকয়েক আগেই অবশ্য অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। গত ১০ জানুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া গ্রাম থেকে আসিফাকে অপহরণ করে একদল দুষ্কৃতীরা। ওই দুষ্কৃতীদের মধ্যে ছিল স্থানীয় পুলিশকর্মীরাও। ছিল দুই নাবালকও। আসিফার মাথা পাথরে থেঁতলে মারার আগে নাকি এক পুলিশ অফিসার হত্যাকারীকে থামতে বলে। সে আর একবার ধর্ষণ করতে চায় আসিফাকে। চার্জশিট মোতাবেক, উত্তরপ্রদেশ থেকে এক ব্যক্তিকে ফোনে জম্মু ও কাশ্মীরে ডেকে আনা হয় লালসা চরিতার্থ করতে। ১৭ জানুয়ারি জঙ্গল থেকে আসিফার দেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরাই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে মেরুকরণের অভিযোগ ওঠে উপত্যকায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও পিডিপির জোট সরকারের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্যের বিজেপি নেতারা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি করছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভিকে সিংয়ের মুখ খোলা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। গতকালই আবার আসিফার খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্তদের হয়ে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপির দুই মন্ত্রী। হিন্দু একতা মঞ্চ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিদেশমন্ত্রী চৌধুরি লাল সিং ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দর প্রকাশ গঙ্গা দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ডে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
গত সপ্তাহে কাঠুয়ার কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কির জেরে এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমের মূল স্রোতে উঠেন আসে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত সাঞ্জি রাম এই জঘন্য কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। তার লক্ষ্য ছিল, রাসসানা এলাকা থেকে বাখরেওয়াল সম্প্রদায়কে হটানো। আর তাই বাখরেওয়াল সম্প্রদায়ের আসিফাকে শিকার বানিয়ে বাকিদের মনে ভয় ধরাতে চেয়েছিল। এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নাম দীপক খাজুরিয়া, সুরেন্দর ভার্মা, পারভেশ কুমারু, সাঞ্জি রামের নাবালক ভাইপো ও সাঞ্জি রামের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। কাঠুয়ার একাংশের দক্ষিণপন্থী মানুষ আবার ধর্ষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আইনজীবীরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে পুলিশকে আদালতে ঢুকতে দিচ্ছিল না। তবে মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে এই দেখানোর পর জঘন্য এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আন্দোলনের ঢেউ এসে লেগেছে রাজধানী দিল্লির গায়েও। সেখানে আজ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রছাত্রী ও মহিলাদের একাধিক সংগঠন। জিগনেশ মেওয়ানি থেকে শুরু করে ফারহান আখতার- সকলেই একবাক্যে দোষীদের কড়া শাস্তির পক্ষে সরব হয়েছেন।
Now the thugs in black coats are invoking Ram’s name to prevent @JmuKmrPolice from filing chalan in 8-year-old Asifa’s rape case in Kathua, Jammu. These people are the biggest enemies of Hinduism. pic.twitter.com/lOc2PMDLfz
— Rahul Pandita (@rahulpandita) April 9, 2018
The post আসিফার ধর্ষক ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে সরব গোটা দেশ, পাশে কেন্দ্রও appeared first on Sangbad Pratidin.