shono
Advertisement
Manmohan Singh

'ইতিহাস আমার প্রতি সদয় থাকবে', বলেছিলেন 'অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'

মনমোহনের মৃত্যু একধাক্কায় দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইতিহাসকেই ফের জীবন্ত করে তুলল।
Published By: Biswadip DeyPosted: 11:30 PM Dec 26, 2024Updated: 10:04 AM Dec 27, 2024

বিশ্বদীপ দে: একজন মানুষের মৃত্যু মুহূর্তে জাগিয়ে তোলে তাঁর জীবৎকালের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি। আর তিনি যদি হন রাষ্ট্রক্ষমতার একদা প্রতিনিধি? তাহলে সেই স্মৃতি কেবল স্মৃতি নয়, তা ইতিহাসেরই খণ্ড প্রজেকশন হয়ে ওঠে। মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) মৃত্যু একধাক্কায় ভারতীয় রাজনীতি তথা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইতিহাসকেই ফের জীবন্ত করে তুলল। মাত্রাতিরিক্ত নীরব, শান্ত একজন মানুষের করা পদক্ষেপে সেদিন রাতারাতি এক নতুন যুগ শুরু হয়েছিল দেশে। এই ঘোর বিজেপিময় ভারতবর্ষের বুকেও সেই ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।

Advertisement

বিতর্ক তাঁকে নিয়ে কম হয়নি। বলা হত, তিনি 'ম্যাডামে'র রিমোট কন্ট্রোলের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হন। নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়, গান্ধী পরিবারের অঙ্গুলি নির্দেশেই দেশ চালান 'অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'। এই ধরনের নানা কুরুচিকর, ব্যক্তিগত মন্তব্যকে হেলায় সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ভারতের মতো দেশে এমন রাজনৈতিক নেতা সচরাচর মেলে না। নেতা হওয়ার প্রাথমিক শর্তই যেখানে ধুরন্ধর বাগ্মিতা, সেখানে মনমোহন তো 'মিসফিট' হবেনই।

কিন্তু কম কথা বলার মানুষ হলেও মনমোহন নিজের কাজে ও সিদ্ধান্তে ছিলেন স্থিতপ্রজ্ঞ। ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময় তাঁর অনমনীয় মনোভাব সবাইকে চমকে দিয়েছিল। সরকার পড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল।

তার চেয়েও আগে মনে পড়ে যায় ১৯৯১ সালের কথা। নরসিমা রাও তখন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন তাঁর অর্থমন্ত্রী। ভারতীয় অর্থনীতি তখন রীতিমতো ধুঁকছে। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডারে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে উদারনীতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতারাতি লাইসেন্স রাজের সমাপ্তি ঘটে যায়। আর ওই এক পদক্ষেপেই বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতি হয়ে উঠেছিল ভারত। যা কেবল খাতায় কলমে দেখা পরিবর্তনই নয়, দেশের আমজনতাও সাক্ষী ছিল কীভাবে বদলাতে শুরু করেছিল ভারত।

২০০৪ সালে কেন তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর 'মুখ' হিসেবে ভেবেছিলেন সোনিয়া? এই প্রশ্নের নানা উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু ঘটনা হল, সেই সিদ্ধান্ত ছিল 'মাস্টারস্ট্রোক'। কোনওদিন লোকসভায় জয় না পাওয়া মনমোহনের জনপ্রিয়তার আঁচ মিলেছিল মানুষের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়ায়। আসলে এর পিছনে যেমন ছিল ১৯৯১ সালের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জাদু, তেমনই ছিল মনমোহনের 'পরিচ্ছন্ন' ভাবমূর্তিও। পরবর্তী ১০ বছরে মাত্র তিনবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মনমোহন। যার মধ্যে শেষটা ছিল বিদায়বেলায়। সেবার অভিমান ঝরে পড়েছিল তাঁর কণ্ঠে। বলেছিলেন, ''মিডিয়ার চেয়ে ইতিহাস আমার প্রতি বেশি দয়াপ্রবণ থাকবে।''

দলমত নির্বিশেষে মনমোহনের মতো ব্যক্তিত্বরা এই বার্তা দিয়ে যান, নিয়মানুবর্তিতা ও কর্তব্যের সঙ্গে গাফিলতি নয়। বছর দুয়েক আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় হুইলচেয়ারে মনমোহনকে দেখে চমকে উঠেছিল দেশ। তিনি যে শুধু ভোট দিয়েছিলেন তাই নয়, এসেছিলেন একেবারে শুরুর দিকে। দেখা গিয়েছিল, প্রথম দু'ঘণ্টায় ভোটের হার খুবই কম। তবু তারই মধ্যে ছিলেন দু'জন- মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদি!

সেদিন ৮৯ বছরের নেতাকে দেখে অনেকেই আশঙ্কায় ভুগেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি করে শারীরিক অসুস্থতার কাছে হার মেনে বিদায় নিলেন মনমোহন। কিন্তু রেখে গেলেন তাঁর কর্মসম্ভার। টুজি কেলেঙ্কারির মতো নানা বিতর্ক দিয়েও যাকে ঢেকে রাখা যাবে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মনমোহন সিংয়ের মৃত্যু একধাক্কায় ভারতীয় রাজনীতি তথা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইতিহাসকেই ফের জীবন্ত করে তুলল।
  • মাত্রাতিরিক্ত নীরব, শান্ত একজন মানুষের করা পদক্ষেপে সেদিন রাতারাতি এক নতুন যুগ শুরু হয়েছিল দেশে।
  • এই ঘোর বিজেপিময় ভারতবর্ষের বুকেও সেই ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
Advertisement