shono
Advertisement
Sonia Gandhi

আরাবল্লীর 'মৃত্যু পরোয়ানা'য় সই মোদি সরকারের, কেন ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সোনিয়া?

খনিজ উত্তোলনে গাছ কেটে পাহাড় ভাঙার তোড়জোড়।
Published By: Kishore GhoshPosted: 04:00 PM Dec 03, 2025Updated: 05:58 PM Dec 03, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশে চোখধাঁধানো সমৃদ্ধির মূল্য কি তা হলে পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং তার ওপর নির্ভরশীল প্রান্তিক মানুষ? নতুন করে এই প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের সায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এক সিদ্ধান্তে। যার উপর দাঁড়িয়ে এবার আরাবল্লীর সবুজ পাহাড়ে বুল়ডোজার ও করাত চালানো হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যিটা হল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই পাহাড় ভাঙা এবং জঙ্গল কাটার কাজ হবে। কেন? খনিজ সম্পদের খোঁজ এবং পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়ন। সরকারের এই পরিকল্পনাকে আরাবল্লীর 'মৃত্যু পরোয়ানা' বলছেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী। কেন বলছেন?

Advertisement

ভারতের উত্তর-পশ্চিমে ৬৯২ কিমি (৪৩০ মাইল) বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী। উত্তর ভারতের দিল্লি থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ হরিয়ানা পার হয়ে পশ্চিম ভারতের রাজস্থান ডিঙিয়ে গুজরাট গিয়ে শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত। বছরভর উত্তর ও পশ্চিম ভারতের জলবায়ু অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে এই পর্বতশ্রেণি। এই অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষায় মাঝে গুজরাট থেকে দিল্লি পর্যন্ত আরাবল্লী পর্বতমালা জুড়ে ১,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত সবুজ বনাঞ্চল সৃষ্টির পরিকল্পনা নেয় সরকার ও পরিবেশবিদরা। যার নাম দেওয়া হয়েছিল 'আরাবল্লীর সবুজ প্রাচীর'। খনিজ উত্তোলনের লোভে সেই আরাবল্লীতে এবার প্রকৃতিকে বলি দেওয়া হবে।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ আরাবল্লী পর্বতে খনিজ উত্তোলন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। এই রায়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের নেতৃত্বের কমিটির সুপারিশে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, ১০০ মিটারের কম উচ্চতার যে কোনোও পাহাড় খননকাজ চালানো যাবে। এর ফলে পাহাড়ের ব্যাপক ক্ষতি হবে না। যদিও এই বিষয়েও এতদিন কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন সোনিয়া গান্ধী।

বুধবার সোনিয়া গান্ধী দাবি করেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে পরিবেশ সুরক্ষা তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। ওরা প্রায় আরাবল্লীর 'মৃত্যু পরোয়ানাতে সই করতে চলেছে'। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেত্রী দাবি করেছেন, ১৯৮০ সালের বন (সংরক্ষণ) আইন এবং ২০২২ সালের বন সংরক্ষণ বিধিমালায় যে সংশোধনীগুলি আনা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আদতে এই সংশোধনীতেই পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং খনিজ উত্তোলনের মতো রাষ্ট্রীয় কাজে প্রয়োজনে পরিবেশ ও বনাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাবল্লীর পর্বতশ্রেণির ১০০ মিটারের কম উচ্চতার পাহাড়গুলিতে খনিজ উত্তোলনে ভূপ্রকৃতির ক্ষতি হবে না, এই ভাবনা হাস্যকর। কারণ এই পর্বতশ্রেণির নব্বই শতাংশ পাহাড় ১০০ মিটারের কম উচ্চতার। সোনিয়া অভিযোগ করেন, আদতে এই সিদ্ধান্ত যেমন পরিবেশের ক্ষতি করবে, তেমনই খনি মাফিয়াদেরও খোলা আমন্ত্রণ জানাবে।

এদিকে সকলের অলক্ষ্যে পরিবেশ উন্নয়নের সূচকে ভারতের দুরবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০১৮ সালের বিশ্ব পরিবেশ সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১৭৭তম। ২০১৬ সালের থেকেও ৩৬টি স্থান পিছনে। তালিকার সর্বনিম্ন পাঁচটি দেশ— বাংলাদেশ, নেপাল, কঙ্গো ও বুরুন্ডির সঙ্গে ভারত একই বন্ধনীতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক প্রগতি ও পরিবেশ সূচকের বৈপরীত্যের মূলে আছে ভূপ্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক বৈচিত্র সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের সুস্পষ্ট ধারণার অভাব, পশ্চিমি উন্নয়ন মডেলের অন্ধ অনুকরণ, দুর্বল পরিচালনা ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত প্রযুক্তির অপ্রতুলতা। প্রশ্ন হল, কবে বোধদয় হবে আত্মধ্বংসী মানুষের? পৃথিবী বেঁচে থাকার অযোগ্য হয়ে উঠলে আধুনিক পরিকাঠামো ধুয়ে খাবে মানুষ?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভারতের উত্তর-পশ্চিমে ৬৯২ কিমি (৪৩০ মাইল) বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী।
  • এদিকে সকলের অলক্ষ্যে পরিবেশ উন্নয়নের সূচকে ভারতের দুরবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
  • পৃথিবী বেঁচে থাকার অযোগ্য হয়ে উঠলে আধুনিক পরিকাঠামো ধুয়ে খাবে মানুষ?
Advertisement