সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বদলে যাবে এশিয়ার বৃহত্তম বসতি ধারাভি (Dharavi)। ৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় বসতি উন্নয়ন প্রকল্পের বরাত পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী (Adani Group)। মহারাষ্ট্র সরকারের (Maharashtra Government) ডাকা টেন্ডারে বরাত পেয়েই প্রকল্পের কাজ শুরুর তোড়জোড় শুরু করেছে গৌতম আদানির (Goutam Adani) সংস্থা। যদিও ইংরেজ আমলে তৈরি বসতির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আশঙ্কায স্থানীয়রা। বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা এর ফলে ধারাভির নিজস্বতা ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারতে বেড়াতে আসা বিদেশিরা আর তাঁদের বস্তিতে আসবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, আর্থিক ক্ষতি হবে তাঁদের, রুজিরুটি হারাবেন তাঁরা। বাধ্য হয়ে অন্যত্র থিতু হবেন অনেকেই।
মধ্য মুম্বইয়ে (Mumbai) প্রায় ৩০০ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত এশিয়ার (Biggest Slum of Asia) বৃহত্তম তথা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বসতি ধারাভি। এখানে বাস করেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। গত ১৫ বছর ধরে ধারাভির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আটকে। এই ১৫ বছরে অন্তত ৪ বার মহারাষ্ট্র সরকার ধারাভি বসতির উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার ডেকেছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। বার বার ধাক্কা খেয়েছে উন্নয়ন পরিকল্পনা। এবার তা সম্ভব হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য সুর ১৮৮৪ সালে গড়ে ওঠা বসতির বাসিন্দাদের গলায়।
[আরও পড়ুন: ২০ হাজারের বেশি অনুদানে বিরোধীদের টেক্কা বিজেপির, ধারেকাছে নেই কংগ্রেস-তৃণমূল]
আসলে ধারাভির একটি নিযস্ব অর্থনীতি রয়েছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন ধরনের ছোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মূলত চামড়া, বস্ত্র এবং মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা। এখানে উৎপাদিত দ্রব্য দেশে-বিদেশে বিক্রি হয়। এছাড়াও খাবারের বিশেষত ইডলি তৈরির ব্যবসা করেন ধারাভির বহু মানুষ। বসতির শ্রমিকদের তৈরি লক্ষ্য লক্ষ্য ইডলি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাণিজ্য নগরে। একটি সূত্রের দাবি, ধারাভির অর্থনীতির মোট মূল্য ৬৫ কোটা ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। যা টোগোর মতো ছোট দেশের থেকেও বেশি।
[আরও পড়ুন: ‘আমাকেও শূর্পনখা বলেছিল মোদি’, ‘রাবণ’ বিতর্কের মাঝে পালটা দিলেন কংগ্রেস নেত্রী]
বসতিবাসীদের যে ফ্ল্যাট দেবে উন্নয়নকারী সংস্থা তা নিয়েও চিন্তায় স্থানীয়রা। ধারাভি নাগরিক সমিতি চালান পল রাফায়েল। তিনি বলেন, “বসতির একটা ঘরে চারটে পরিবার থাকে। যদিও একটি ঘরের জন্য একটি মাত্র ফ্ল্যাট দেবে সংস্থা। অন্যরা কোথায় আশ্রয় নেবে!” রাফায়েল বলেন, “আদানী গোষ্ঠী ধারাভির উন্নয়ন প্রকল্প পাওয়ায় আমরা খুশি নই।” রাফায়েল আরও জানান, নোনতা খাবার, চামড়াজাত পণ্য, এমব্রয়ডারি করা পোশাক, ইমিটেশনের গয়না তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। হয়তো ফ্ল্যাটের ভাল দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু এর বসতিবাসিরা তা বেচে অন্যত্র চলে যাবেন।” সব মিলিয়ে তাঁদের আশঙ্কা ধ্বংস হয়ে যাবে ১২৬ বছরের সুখ-দুঃখের ইতিহাস ও তার নিজস্বতার রং।