সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মাস্টারস্ট্রোক। একসঙ্গে দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ভারতরত্ন দেওয়ার খবর জেনে এটাই বলছে দেশের রাজনৈতিক মহল। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যতটা সম্ভব ভোট নিজেদের দিকে টানতে উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির। সেই জন্যই ‘বিজেপি বিরোধী’ মুখকেও ভারতরত্ন দিতে চাইছে তারা।
শুক্রবার টুইট করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনজনকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিং, পি ভি নরসিমা রাও (PV Narsimha Rao) ও বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন এবার থেকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানে ভূষিত হবেন। এই ঘোষণার পরেই দেশজুড়ে চর্চা শুরু হয়, কেন এই তিনজনের নামই বেছে নেওয়া হল ভারতরত্ন সম্মানের জন্য? বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে তিন ভারতরত্ন প্রাপকের আলাদা গুরুত্ব ও প্রভাব রয়েছে।
প্রথমেই আসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিংয়ের (Chowdhury Charan Singh) নাম। স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বলে ‘হেভিওয়েট’দের মধ্যে কার্যত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল জাঠ কৃষক নেতার নাম। চরণ সিংয়ের পরে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্রীয় লোক দল গঠন করেন পুত্র। বর্তমানে চরণের নাতি জয়ন্ত চৌধুরি সেই দলের প্রধান। লোকসভার আগে জল্পনা শুরু হয়েছে, এনডিএতে যোগ দিতে পারে আরএলডি। সেক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের কৃষক ও জাঠ ভোটের অধিকাংশই চলে আসবে এনডিএর ঝুলিতে। তবে সূত্রের খবর, এনডিএর কাছে বিশেষ শর্ত রেখেছিলেন জয়ন্ত। তার ভিত্তিতেই ভারতরত্ন (Bharat Ratna) দেওয়া হয়েছে চরণকে। ফলে বিজেপি হোক বা আরএলডি, উত্তরপ্রদেশের জাঠ ভোট পড়বে এনডিএ শিবিরে।
[আরও পড়ুন: শনিবার কি রাজ্যসভায় পেশ হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল? জল্পনা তুঙ্গে]
দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের (Congress) ক্ষেত্রে বিজেপির স্ট্র্যাটেজি খানিকটা আলাদা। যোগ্যদের ব্রাত্য করে রেখেছে হাত শিবিরের নেতৃত্ব, বারবার এই বলে সুর চড়িয়েছে তারা। দীর্ঘদিন ধরেই মোদি-সহ গেরুয়া শিবিরের অন্যান্য নেতারা দাবি করে এসেছেন, কংগ্রেসের অন্দরে ‘রাজ’ করে গান্ধী পরিবার। দলটাকে নিজেদের পারিবারিক সম্পত্তি করে ফেলেছে তারা। এমনকি রাজ্যসভায় দাঁড়িয়েও মোদিকে বলতে শোনা গিয়েছে, সোনিয়া-রাহুল উপস্থিত নেই বলেই মন খুলে কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওকে নিয়েও একাধিকবার ‘সহানুভূতি’ প্রকাশ করেছে বিজেপি। অর্থনৈতিক উদারীকরণের অন্যতম কাণ্ডারী নরসিমাকে কংগ্রেস যথাযথ সম্মান দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, নরসিমাকে ভারতরত্ন দিয়ে কংগ্রেস সমর্থকদের মনে প্রভাব ফেলেছে বিজেপি (BJP)। কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক ধসিয়ে নিজেদের ৪০০ আসন জয়ের স্বপ্ন ছোঁবে গেরুয়া শিবির।
ভারতরত্ন প্রাপকদের তালিকায় শেষ নাম এম এস স্বামীনাথন (MS Swaminathan)। ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক। কৃষিবিজ্ঞানী স্বামীনাথনের হাত ধরে বদলে গিয়েছিল ভারতের খাদ্যশস্য উৎপাদনের ছবিটা। শুধু কৃষি নয়, কৃষকদের উন্নতি নিয়েও সমানভাবে ভাবিত ছিলেন তিনি। কৃষকদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে কৃষিজমির উন্নতি করা, নানা সুপারিশ করেছেন। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা ফের বড়মাপের বিক্ষোভ করে দিল্লি পৌঁছনোর পরিকল্পনা করছেন। এহেন পরিস্থিতিতে তাঁদের কাছে একটা ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল সরকারের তরফে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ‘মোদি সরকার পাশে আছে’, স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দিয়ে এই বিষয়টাই তুলে ধরা হল কৃষকদের কাছে। আপ-কংগ্রেস নয়, পাঞ্জাব ও অন্যান্য রাজ্যের কৃষকরা বেছে নেবেন পদ্মফুলকেই- আশা বিজেপির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর ও মধ্য ভারতে ইতিমধ্যেই অধিকাংশ আসন জেতার ‘গ্যারান্টি’ রয়েছে বিজেপির। কিন্তু আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০টি আসন জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। সেই জন্যই এবার দাক্ষিণাত্য জয়ের দিকে মন দিয়েছে গেরুয়া শিবির। পরিকল্পনামাফিকই সংসদে মোদির ভাষণে উঠে এসেছে দক্ষিণের শহরগুলোর নাম। তবে এতকিছুর মধ্যে উত্তর ভারতের ভোটব্যাঙ্কের দিকেও নজর রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। নিশ্চিত ভোট যেন কোনও মতেই হাতছাড়া না হয়, সেই চেষ্টায় একচুল ত্রুটিও রাখছে না গেরুয়া শিবির।