সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনের (China) দ্রুত সেনা অপসারণে রীতিমতো অবাক হয়েছেন ভারতীয় সেনা কর্তারা। হতবাক হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রকও। এবার প্রশ্ন, একটাই, প্যাংগংয়ে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু থেকে যত দ্রুত পিছিয়েছে তত দ্রুতই কি ফিরবে লালফৌজ?
[আরও পড়ুন: ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে জোর, সেনাবাহিনীকে ১১৮টি অর্জুন ট্যাংক দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী]
বিশ্লেষকদের মতে, চিনের দ্রুত পশ্চাদপসারণ নিয়ে সাউথ ব্লক উদ্বিগ্ন। যে ইস্যুতে গত নয় মাস ধরে অশান্তি ও জলঘোলা হয়েছে সেই সেনা অপসারণের কাজটা চিন এত দ্রুততার সঙ্গে এবং এত সুশৃঙ্খলভাবে করছে যে অবাক হয়ে গিয়েছেন ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সির কর্তারাও। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে, যদি কঠিন কাজটা এত দ্রুত ও সহজে করা সম্ভব হয়, তাহলে ফের উত্তেজনা বা সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হলে ততটাই দ্রুততার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখায় (LAC) ফের সেনা ও ট্যাংকবাহিনী মোতায়েন করতে সক্ষম হবে চিন। সেক্ষেত্রে ফের দ্রুত ফিরে আসার এবং পজিশন নেওয়ার রাস্তা খোলা রাখতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং উচ্চপদস্থ সেনাকর্তারা অবশ্য প্রতিরক্ষামন্ত্রককে আশ্বস্ত করেছেন, ঘাবড়াবার কিছু নেই। পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) যতটা ক্ষিপ্র, ততটাই তৎপর ভারতীয় সেনাবাহিনীও। উপযুক্ত সময়ে ফরোয়ার্ড পোস্টে পজিশন নিয়ে সীমান্তকে দুর্ভেদ্য করে তুলতে পারবে ভারতীয় সেনা। তবে শুধু আশ্বাস নয়, ভারতীয় সেনা যে এটা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে এমনটা জোর দিয়ে বলছেন প্রাক্তন এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তারাও।
সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মাইনাস তাপমাত্রায় প্যাংগং হ্রদ জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। তার উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে চিন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০০-র বেশি ভারী ট্যাঙ্ক এবং বেশ কিছু হাউৎজার কামান সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে দুই কিলোমিটার দূরে। সেনা সূত্রে খবর, অন্তত ১০০টি ট্রাক এবং সাঁজোয়া গাড়িও সরিয়ে নিয়েছে লালফৌজ। প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া আট নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে শ্রীজাপ সেক্টরে সরানো হয়েছে চিনের সব ট্যাঙ্ক, হাউৎজার কামান। পরিস্থিতির উপর প্রতি মুহূর্তে কড়া নজর রাখছে ভারতীয় সেনার উপরমহল। সেই মতো পদক্ষেপ ও কৌশল বদলাচ্ছেন তাঁরাও।
ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, বুধবার সকাল ন‘টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ন’টার মধ্যে পিপলস লিবারেশন আর্মি তাদের বিপুল সংখ্যক সেনা, শয়ে শয়ে ট্যাঙ্ক ও, সাঁজোয়া গাড়ি, হাউৎজার সরিয়ে নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক শীর্ষ আমলা একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “যতটা ঝড়ের বেগে ওরা সেনা সরিয়েছে ততটা ঝড়ের বেগেই ওরা ফিরে আসতে পারে। তাই আমাদের চূড়ান্ত সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা একটা মিলিটারি আর্ট। এই আর্টটা লালফৌজ ভালই জানে। তাই আমরাও আমাদের মতো করে কৌশল সাজাচ্ছি।”
গালওয়ান মডেল অনুসরণ করে দক্ষিণ প্যাংগং থেকে সেনা অপসারণ করছে চিন। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারভানে। এই প্রক্রিয়া সফল হলে গোগরা, হটস্প্রিং, দেপসাং উপত্যকা এবং উত্তর প্যাংগংয়ে সেনা অপসারণ কার্যকর করার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবে ভারতীয় সেনা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, চিন যেন কোনও কৌশল বা ফাঁদ তৈরি করতে না পারে নজর রাখা হচ্ছে সেদিকেও।