স্বাধীনতা দিবসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি আবেদন রাখলেন ‘ইনক্লুসিভ’ বিচারব্যবস্থার। আমরা উন্মুখ।
‘দ্য গ্রেটেস্ট চ্যালেঞ্জ বিফোর দ্য ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি ইজ টু এলিমিনেট দ্য ব্যারিয়ার্স টু অ্যাকসেসিং জাস্টিস।’ ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ বা প্রতিবন্ধকতা কী? স্বাধীনতা দিবসের একটি অভিভাষণে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড় তা নির্দিষ্ট করেছেন স্পষ্ট-কণ্ঠে। সেটি হল, ‘জাস্টিস’ বা ‘ন্যায়’-প্রাপ্তির অধিকার করায়ত্ত করতে পারা।
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু কী করে ন্যায়ের দাবি জানাতে হবে, কী করে তা লভ্য হতে পারে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা প্রচুর। অস্বীকার করার অবকাশ নেই, দেশের বিপুল প্রান্তিক মানুষ সেই ধাঁধা ও জটিলতার টানাপোড়েনে আচ্ছন্ন। তাঁদের জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির আশ্বাসবাণী অবশ্যই একটি প্রাপ্তি। কেননা, তিনি বলেছেন, বিচারব্যবস্থাকে ‘ইনক্লুসিভ’ বা সর্বত্রগামী হতে হবে। আর, আইনি সুবিচারের আশীর্বাদ যেন পঙ্ক্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা শেষতম মানুষটিও পায়।
[আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনে মোদি গড়ে কি ধাক্কা দিতে পারবে বিরোধী জোট?]
‘জলি এলএলবি’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ২০১৩ সালে। এবং ‘ব্ল্যাক কমেডি’-র বর্গে থাকা এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য আর্বতিত হয়েছিল এই মর্মে যে, সুবিচার যেন প্রতিটি নাগরিকের উপর বর্ষিত হয়, কোনও প্রভেদ বা ‘অপর’ নির্মাণের চেষ্টা করা যেন না হয়। বিচারকের চরিত্রে ছিলেন ‘কাল্লু মামা’ খ্যাত সৌরভ শুক্লা। রায় ঘোষণার প্রাক্-মুহূর্তে তাঁর মারফত একটি অনবদ্য বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তা এই যে, এখনও দেশের মানুষ যখন বিচার-বঞ্চিত বলে নিজেদের মনে করে, তখন তারা বুক ঠুকে দাবি করে যে, আদালতে বোঝাপড়া করে নেব। যার কথা পুলিশ শোনেনি, তার আরজি ও আবেদন প্রশাসনের দরজায় বারবার ঠোক্কর খেয়ে অবহেলিত হয়েছে, সেই মানুষটিও একবুক প্রত্যাশা নিয়ে আদালতের সমীপে অবতীর্ণ হয়। ভাবে, আদালত অন্তত তাকে ফেরাবে না। মন দিয়ে শুনবে তার সমস্যার কথা। আর, এই কর্ণপাত করার প্রক্রিয়াটি হবে যুক্তির দিকে ঝোঁকা, এমপ্যাথি-পূর্ণ। দয়া নয়, বাঁহাতে মনসা পুজোর মতো দাক্ষিণ্য নয়, আবেগ এবং যুক্তি যেন এই প্রক্রিয়ায় সম্পূরক হয়ে ওঠে। একমাত্র তাহলেই অবিচারের অন্ধকার কেটে সুবিচারের আলো আমাদের পাথেয় হয়ে উঠবে।
দেশের প্রধান বিচারপতির সুবচনটি জনমানসে ধ্বনিত হল ১৫ আগস্টের দিন। স্বাধীনতার সঙ্গে বন্ধনমুক্তির সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ন্যায় ও সাম্যের ধারণার। এই প্রতিটি ‘সূচক’ আবার বিচারব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
তবে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেও একটি সংশয়ের কথা উল্লেখ করতেই হয়। সেটি হল, বিচারপ্রার্থী প্রতিটি নাগরিক ‘সিস্টেম’ বা প্রচলিত রীতির দ্বারা দলিত হবে না তো? নানা সময়ে এই অভিযোগ আমরা উঠতে দেখি যে, ভ্রষ্টাচারের আলিঙ্গন থেকে বিচারব্যবস্থা মুক্ত নয়, বা বিপরীতভাবে বললে, স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে অপারগ। মানুষের মনে এখনও বিরাজ করছে অবিশ্বাস ও অসহায়তার চোরকাঁটা। সকলের জন্য সর্বত্রগামী বিচারের প্রথম শর্ত- সেই ভয় জয় করা।