সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিজেপির অন্তর্কলহ সামনে চলে এল পুরুলিয়াতেও। বিজেপির জেলা সভাপতির ফেসবুক গ্রুপেই মানবাজারের পরাজিত বিজেপি প্রার্থীকে কার্যত ‘টাকা লুটেরা’ বলে আক্রমণ করলেন দলেরই কর্মীরা। নির্বাচনের লড়ার টাকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুললেন তাঁরা। গেরুয়া শিবিরে এমন কোন্দলে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি (Purulia BJP)।
একের পর এক ফেসবুক পোস্টে মানবাজারের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী গৌরি সিং সর্দারকে খোঁচা দিয়েছেন দলের কর্মীরাই। ওই গ্রুপে থাকা কার্তিক মাহাতো নামে একজন এই পোস্টগুলি করেন। সেই পোস্টের প্রেক্ষিতে নানান মন্তব্যও চলছে। একটি পোস্টে লেখা আছে, “টিকিট পেলেই মজা করে দাঁড়ান আর দুর্যোগ ভোগ করতে হয় আমাদের। মানুষকে সুরাহা দিন। খালি টাকা লুঠার বুদ্ধি আপনার (গৌরি সিং সর্দার)।”
[আরও পড়ুন: বাংলাতেও ঢুকে পড়ল ব্ল্যাক ফাঙ্গাস! তিনজনের শরীরে মিলল মারণ ছত্রাকের হদিশ]
সেই ২০১১ সাল থেকে পরপর তিন বার মানবাজার বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী হন দলের জেলা সহ–সভাপতি গৌরি সিং সর্দার। তিনবারই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্র মন্ত্রী সন্ধ্যারাণী টুডু-র কাছে ওই বিজেপি প্রার্থী হেরে যান। সোশ্যাল সাইটে বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভ, “মানবাজার জেড পি ২৬–র যে টাকাটা বাকি আছে সেটা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মিটিয়ে দিন। এটা হুমকি বা ধমকি নয়। এটা অধিকার।” আবার আরেকটি পোস্টে ওই কার্তিক মাহাতোই লিখেছেন, “গৌরিদি মানবাজারকে হারিয়ে দিয়ে টাকাটা লুঠে নিয়ে গেলেন।” সোশ্যাল সাইটে এই পোস্টগুলি হওয়া মাত্রই তা ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে। দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা মানবাজারে হেরে যাওয়া বিজেপি প্রার্থী গৌরি সিং সর্দার বলেন, “কার্তিক মাহাতো কে সেটা আমরা দেখছি। উনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী নন। তবে ভোটের সময় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল তার কিছু টাকা বাকি আছে। যেমন গাড়ি ভাড়া, এইসব। এই বিষয়ে জেলা সভাপতি ও মানবাজারের কার্যকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।”
এদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন ওই গ্রুপটি তাঁর নয়। অন্য কেউ তাঁর নাম দিয়ে খুলতে পারেন। অথচ সেখানে মানবাজার বিধানসভা এলাকার বিজেপি নেতা–কর্মীরা রয়েছেন। ওই গ্রুপে আছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য। জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “ওই ফেসবুক গ্রুপ আমার খোলা নয়। সেখানে যেসব কথা লেখা হয়েছে তাঁকে আমি সমর্থন করি না।” তবে বিজেপির পরাজিত প্রার্থীকে নিয়ে দলেই সোশ্যাল সাইটে এমন আক্রমণ করায় মুখ পুড়ল জেলা বিজেপির। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-তথ্য-ক্রীড়া স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু বলেন, “বাংলা দখল করার দিবা স্বপ্নপূরণ না হওয়ায় পুরুলিয়াতেও বিজেপির কলহ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এটাই ওদের সংস্কৃতি। অপেক্ষা করুন, আরও অনেক কিছু দেখতে পাবেন।”