রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: দীনেশ কার্তিক চট করে রাগেন না। নতুন কেকেআর ক্যাপ্টেন স্বভাবশান্ত। হেরে গেলেও হেসে কথা বলেন। কে জানত, শনিবাসরীয় ইডেনে সেই একই দীনেশ কার্তিক এ রকম ক্ষেপে যাবেন! ক্ষোভের কারণ ডাকওয়ার্থ-লুইস নামক এক অদ্ভুতুড়ে নিয়ম এবং তার পাল্লায় পড়ে ঘরের মাঠে কেকেআরের হার।
ইডেনে কেকেআর অধিনায়ককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কিংস ইলেভেনকে পুরো কুড়ি ওভার ব্যাট করতে হলে কেকেআরের দিকে ম্যাচ ঘুরে যেতে পারত কি না। নাইট অধিনায়ক শুরুটা করেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজে। বলেন, “বলা মুশকিল। আমাদের ওই সময় দু’টো উইকেট তুলতে হত। তা হলেই ওদের উপর চাপ বাড়ানো যেত।” কিন্তু তারপর আচমকাই টি-টোয়েন্টির ধুন্ধুমার ব্যাটিং চালু করে দিলেন। বলে দিলেন, “কিন্তু একটা জিনিস বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। বৃষ্টিতে খেলাটা যখন বন্ধ হল, ওদের ওভারপিছু আট রান করে দরকার। কিন্তু খেলা আবার যখন শুরু হল, ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে তা কিনা দাঁড়াল ওভার পিছু ছ’রানে! মানে, রান আ বল! চমৎকার! ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম যে লোকের কতটা বোধগম্য হয়, তা নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে!” অর্থ খুব সহজ এবং স্বচ্ছ। কেকেআর যত না শনিবার হেরেছে গেইল তাণ্ডবের কাছে। তার চেয়ে বেশি হেরেছে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মের কাছে।
[কালবৈশাখী আর গেইল ঝড়েই তছনছ নাইটদের সাজানো সংসার]
ডাকওয়ার্থ-লুইস ও তার অদ্ভুত অঙ্কের নিয়মাবলীর ফাঁদে পড়ে টিমের স্বপ্নের সমাধি ক্রিকেট ইতিহাসে বারবার ঘটেছে। বছর আটেক আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে ছ’ওভারে ৬০ রান তুলে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই নিয়মের সুবিধে নিয়ে জিম্বাবোয়ে আবার একই টুর্নামেন্টে হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। ১৭৩ তাড়া করতে নেমে পাঁচ ওভারে ৪৪ তুলে! তবে রেন রুলের চিরকালীন কুখ্যাত নির্দশন হয়ে আছে অবশ্যই ১৯৯২ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। যেখানে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১৩ বলে ২২। আর খেলা শুরু হয়ে রেন রুলের কবলে পড়ে তা দাঁড়ায় ১ বলে ২২ রান!
তবে এদিন বৃষ্টি ভেজা ইডেনে গ্রাউন্ডস্টাফদের দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। প্রবল ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও মাঠ ঢাকা দিতে ব্যস্ত গ্রাউন্ডস্টাফরা। অথচ তাঁদের গায়ে সামান্য রেনকোটটুকুও নেই। আর এই দৃশ্যই প্রশ্ন তুলেছে সিএবি-র মানসিকতা নিয়ে। যে ক্রিকেট সংস্থা খাবার আর গাড়ির জন্য মোটা অঙ্কের বিল বানায়, তাঁদের কর্মীদের একটা করে বর্ষাতিও জোটে না? এই টুর্নামেন্টে তো কোটি-কোটি টাকা জলের মতো খরচ হচ্ছে। তবে কেন এই হাল?
“আমি বুঝে পারছি না, কেন আইপিএলে ভিজেডি (জয়দেবন সিস্টেম বলে যা পরিচিত) মেথড ব্যবহার হবে না? এটা ভারতীয় নিয়ম। যা ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ব্যবহার করে সাফল্যও পাওয়া গিয়েছে। আইপিএল তো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট। তাহলে সেখানে কেন ডাকওয়ার্থ-লুইস মানা হবে? কেন সেখানে ভবিষ্যতে ভিজেডি মেথড প্রয়োগ করার কথা ভাবা হবে না?” ফুঁসতে ফুঁসতে জুড়ে দেন উত্তপ্ত কার্তিক। অথচ এ দিন একটা সময় পর্যন্ত ভাবাই যায়নি কার্তিকের ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম নিয়ে বিদ্বেষ শিরোনাম নিয়ে চলে যাবে। শুধু হার নয়, কেকেআরের এক নম্বর ভরসা যিনি, সেই আন্দ্রে রাসেল শনিবার নতুন চোট-আতঙ্ক তৈরি করলেন!
[চ্যাপেলের ‘গোপন অভিসন্ধি’র কথা সৌরভকে জানিয়েছিলেন শেহবাগ]
কিংস ইনিংসের চতুর্থ ওভার চলাকালীন আচমকা একটা ডেলিভারি করতে গিয়ে পিচের উপর পড়ে যান রাসেল। খোঁড়াতেও শুরু করেন। এবং পরের ডেলিভারিটা করার সময় বুঝে যান, সম্ভব নয়। ঘটনা হল, রাসেলকে নিয়ে একটা আশঙ্কা আইপিএল মরশুমের শুরু থেকে ছিল। পাকিস্তান সুপার লিগে মাঝপথ থেকে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিটকে যান ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। আইপিএলে পরে চোট সারিয়ে ফিরে আসেন ঠিকই, কিন্তু চোট তাঁকে সময়-সময় ভুগিয়েছে। শোনা গেল, রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে রাসেল বল করতে পারেননি হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট চাগাড় দিয়ে ওঠায়। তবে কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বললেন, হ্যামস্ট্রিংয়ে সামান্য চোট আছে। কিন্তু তা গুরুতর নয়। বরং দিন দু’য়েক পূর্ণ বিশ্রাম পেলে ঠিক হয়ে যাওয়া উচিত।
The post ডাকওয়ার্থ লুইসেই হার, ম্যাচের পর ক্ষোভ উগরে দিলেন কার্তিক appeared first on Sangbad Pratidin.