সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় উত্তাল আমেরিকা। প্রশ্ন উঠছে রিপাবলিকান নেতার নিরাপত্তা নিয়ে। গাফিলতির দায় নিয়েছে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। ট্রাম্পকে নাকি খুনের ছক কষছে ইরান! নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই নাকি হত্যা করা হতে পারে তাঁকে। এনিয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে সিক্রেট সার্ভিস।
গত ১৩ জুলাই, শনিবার নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে হামলার শিকার হন ট্রাম্প। দলীয় কর্মীর ছোঁড়া গুলি কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় বর্ষীয়ান নেতার। সাক্ষাৎ মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছেন তিনি। হামলাকারী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকসকে ঘটনাস্থলেই খতম করে সিক্রেট সার্ভিসের অফিসাররা। তবে ট্রাম্পকে খুনের 'মোটিভ' এখনও পরিষ্কার নয়। চলছে তদন্ত। নিহত ক্রুকসের সঙ্গে ইরানের কোনও সম্পর্ক থাকার কথাও মার্কিন প্রশাসন বলেনি।
সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ দুই মার্কিন আধিকারিকের দাবি, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল যে, ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে ইরান। এমনকী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা হিংসামূলক ঘটানতেও তেহরানের হাত ছিল বলেও নাকি সতর্ক করা হয়েছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (NSA) এক কর্তারও দাবি, পেনসিলভ্যানিয়া সভার আগে সিক্রেট সার্ভিসকে ইরানের হুমকির বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ট্রাম্পের নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরও ঠেকানো যায়নি শনিবারের ঘটনা। ফলে উঠছে নানা প্রশ্ন। তবে ট্রাম্পের উপর হামলায় ইরানের হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় মার্কিন প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: ‘পরমাণু শক্তিধর সত্যিকারের ইসলামিক দেশ ‘, ব্রিটেনকে খোঁচা ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর]
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই শোরগোল পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। যদিও ইরান এনিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের ইসলামিক রিপাবলিকের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের চোখে ট্রাম্প এক জন অপরাধী। তাঁর নির্দেশে সোলেমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অপরাধের জন্য তিনি শাস্তি পাবেন ঠিকই। কিন্তু সেটা আইনের পথে। বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রাম্পকে শাস্তি দিতেই বদ্ধপরিকর ইরান।”
তবে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যে ইরানের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয় তা কারও অজানা নয়। দেশের শীর্ষ সেনাকর্তা কাশেম সোলেমানির হত্যার মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ইরান। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তেহরান জানে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে ফের ইরানে হামলা চালাবেন। ফলে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনের উপর কড়া নজর রাখছে ইসলামিক দেশটি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলায় ‘কাডস ফোর্স’-এর কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলেমানির মৃত্যু হয়। তাঁর সঙ্গেই প্রাণ হারান PMF-এর ডেপুটি কমান্ডার আবু মেহদি আল-মুহানদিস ও বিমানবন্দরের প্রোটোকল অফিসার মহম্মদ রেদা-সহ আটজন। অভিযোগ, এই হামলার জন্য দায়ী তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য মার্কিন আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত, তেহরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে আনার পর থেকে ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সংঘাত বাড়ে। তার মাঝেই আগুনে ঘি ঢালে সোলেমানির মৃত্যু। ফলে ইরানের নির্দেশে যে ট্রাম্পের উপর হামলা হবে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক মহল।