গৌতম ব্রহ্ম: ‘যত মত তত পথ’-এর অপব্যাখ্যা দেওয়া ইসকনের সেই ব্রহ্মচারী এইচজি অমোঘ লীলা প্রভুজিকে নিষিদ্ধ করা হল। প্রায়শ্চিত্ত করতে একমাসের জন্যে পাঠানো হল মথুরায়, এমনটাই জানাল ইসকন। সংস্থার তরফে রাধারমণ দাস এই খবর জানিয়ে বলেছেন, “নিজের কৃতকর্মের জন্যে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন অমোঘ লীলা স্বামী। এই এক মাস তাঁকে যাবতীয় প্রবচন দেওয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়বে না প্রত্যাহার করা হবে, শুদ্ধিকরণ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে এই অমোঘ লীলা ব্রহ্মচারীর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। যাতে তাঁকে স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের একাধিক বক্তব্যের সরাসরি বিরোধিতা করতে দেখা যায়। বিদ্রুপ করতে দেখা যায়। নবীন ব্রহ্মচারীর বক্তব্যে আহত হন বহু ভক্ত, ব্রহ্মচারী, গেরুয়াধারীও। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। বিদ্যুতের গতিতে জনমত বাড়তে থাকে। সাংবাদিক কুণাল ঘোষ সেই সন্ন্যাসীর ক্ষমা প্রার্থনার দাবি তোলেন।
[আরও পড়ুন: খবর পড়ছেন সুন্দরী সঞ্চালিকা! AI-এর ব্যবহারে চমক ওড়িশার টিভি চ্যানেলের]
গর্জে ওঠে বাংলা পক্ষ-সহ একাধিক সংগঠন। তাঁরাও সেই হিন্দিভাষী ব্রহ্মচারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। অতঃপর টনক নড়ে ইসকনের। সংগঠনের পক্ষে রাধারমণ দাস জানান, ওই ব্রহ্মচারী যা বলেছেন সেটা একান্তই তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। ইসকনের কোনও সমর্থন নেই। উলটে এই ধরনের বক্তব্য পেশ করার জন্যে অমোঘ লীলা ব্রহ্মচারীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে পাঠানো হচ্ছে মথুরায়। যাতে নিজের কৃতকর্মের জন্যে অনুশোচনার আগুন জ্বলে ওঠে তরুণ সন্ন্যাসীর অন্তরে। ইসকনের তরফে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে।
কে এই এইচজি অমোঘ লীলা প্রভুজি (HG Amogh Lila Prabhuji)? ৪৩ বছর বয়সি ওই সন্ন্যাসী ইসকনের নিউ দিল্লির দ্বারকা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট। পূর্বাশ্রমের নাম আসিস আরোরা। ১ জুলাই লখনউতে জন্ম। বাবা Raw’র আধিকারিক ছিলেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে মিজোরাম, গ্যাংটক, দার্জিলিংয়ে স্কুলজীবন কেটেছে। পাঞ্জাবি এই তরুণ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক করে একটি মার্কিন বহুজাতিক সংস্থায় যোগ দেন। দুই বোনের বিয়ে হওয়ার পর ২৯ বছর বয়সে ইসকনে যোগ দেন।
ভাল কথা বলার সুবাদে প্রবচনকারী হিসাবে দ্রুত গুরুত্ব বাড়ে এই সন্ন্যাসীর। কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে মাঝেমধ্যেই তিনি অন্য ধর্মগুরুদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। কখনও স্বামী বিবেকানন্দের ‘গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভাল’। বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করেছেন, কখনও আবার ঠাকুর রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বক্তব্য নিয়ে বিদ্রুপ করে ওই বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, “সব পথে অস্ট্রেলিয়া বা মায়াপুর যাওয়া যায়?” রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের কথা বলার সময় বিশ্রী অঙ্গভঙ্গিও করতে দেখা যায় এই হিন্দিভাষী ব্রহ্মচারীকে। অবশেষে অমোঘ লীলার কিছুদিনের জন্যে রাশ টানল ইসকন।