সোহম দে: তিনি পুরোদস্তুর মিতভাষী। সচরাচর মেজাজ হারান না। কোনও ফুটবলার ঠিক মতো পারফর্ম করতে না পারলে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে ভুল ধরিয়ে দেন। নিঃসন্দেহে বলাই যায় প্রাক্তন এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) কোচ রবি ফাউলারের থেকে তিনি একদমই আলাদা। ফাউলার যেমন ছিলেন খুবই আগ্রাসী। সেই তুলনায় তিনি অনেকটাই বরফশীতল। কিন্তু শনিবারের ম্যাচটা যে ডার্বি। ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় ফিক্সচার। প্রতিটা বাঙালির কাছেই চিরআবেগের এক লড়াই। মাণ্ডবীর তীরে স্বপ্নের দ্বৈরথের আগে তিনিও তাই আর নির্লিপ্ত থাকতে পারলেন না। তিনি ম্যানুয়েল দিয়াজ (Manuel Manolo Díaz)।
ড্রেসিংরুমকে চাপমুক্ত রাখতে পছন্দ করা সেই কোচ ফুটবলারদের তুরীয় মেজাজেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বসলেন, “ডার্বি জিততে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করো।” প্রতিটা দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি শুধু পড়াশুনো করে চলেছেন বিপক্ষ নিয়ে। এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) পুরনো ম্যাচের হাইলাইটস যেমন দেখছেন। আবার সহকারীদের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তেই আলোচনা করছেন কৃষ্ণদের বিরুদ্ধে কোন ছক কার্যকরী হতে পারে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান লক্ষ্য একটাই। লক্ষ্যটা লাল-হলুদ ভক্তদের ডার্বি-জয় উপহার দেওয়া।
[আরও পড়ুন: ISL Derby: ‘বুমোস বা কৃষ্ণ নয়, এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলছি’, বললেন দিয়াজ]
ডার্বি নিয়ে দিয়াজ ঠিক কতটা তেতে আছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল সাংবাদিক সম্মেলনেই। প্রায় প্রতিটা বিশেষজ্ঞই এসসি ইস্টবেঙ্গলের পাশে ‘আন্ডারডগে’র তকমা বসিয়েছেন। সেই সমস্ত বিশেষজ্ঞদের পালটা দিয়ে দিয়াজ অবশ্য যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিতেই বললেন, “বিশ্বাস করুন আন্ডারডগ তকমা নিয়ে এতটুকুও ভাবছি না। জানি এটা এ বারের আইএসএলে (ISL) আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ। তাতেও কোনও অজুহাত দেব না। মানছি এটিকে মোহনবাগান দারুণ দল। আন্তোনিও হাবাস খুব ভাল একজন কোচ। তাতেও আমরা তৈরি ডার্বির জন্য।” কোন ফর্মেশনে তিনি দল সাজাবেন সেটা নিয়ে কিছু বললেন না ঠিকই। তবে কী ভাবে বিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের থামানোর কথা ভাবছেন তার সম্বন্ধে একটু আগাম আন্দাজ দিয়ে দিলেন স্প্যানিশ কোচ। বললেন, “এটিকে মোহনবাগান মানেই শুধু কৃষ্ণ আর বুমোস (Hugo Boumos) নয়। মানছি, ওরা দারুণ ফুটবলার। কিন্তু ডার্বি জিততে হলে বিপক্ষের প্রতিটা ফুটবলারকে থামাতে হবে। পরিস্থিতির উপরেই নির্ভর করছে আমাদের স্ট্র্যাটেজি কী হবে। যদি বল আমাদের বক্সে বেশি থাকে তা হলে হয়তো আমরা ম্যান টু ম্যান মার্কিং করব বিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের।”
[আরও পড়ুন: ISL 2021: এসসি ইস্টবেঙ্গলের নাম উঠতেই নিজেকে গুটিয়ে নিলেন সবুজ-মেরুন কোচ হাবাস]
শুক্রবার সকালে পুরোদমে অনুশীলন করে লাল-হলুদ। যা খবর তাতে দিয়াজের গেমপ্ল্যান ঠিক এমন এক, ছোট ছোট পাস দিয়ে মুভ তৈরি করা। দুই, বিপক্ষ বল পেলেই প্রেস করা। তিন, ওপেন প্লে ছাড়াও সেট পিস পরিস্থিতিতে গোল করার চেষ্টা করা। মিশন ডার্বির আগে দিয়াজের লাল-হলুদ শিবিরে কোনও টেনশনের চোরাস্রোত নেই। আছে বরং আত্মবিশ্বাস। ডার্বির গুরুত্ব কতটা সেটাই চিমা-পেরোসেভিচদের বোঝাচ্ছেন দলের ভারতীয় ফুটবলাররা। দিয়াজ-মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ লাল হলুদের জন্য আজ কী বরাদ্দ থাকবে? দেখা যাক।