সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরের রেশ এখনও মিলিয়ে যায়নি। ক্যাপিটলে তুমুল ‘মোদি মোদি’ স্লোগানই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এখন কোন খাতে বইছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নেহরু জমানার রুশ বাঁধন কি আলগা হচ্ছে? এই প্রেক্ষাপটেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সাফ বার্তা দিয়েছেন, ‘দেশই আগে’। ইউক্রেন যুদ্ধের জটিল পরিস্থিতিতেও ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতিই মূলমন্ত্র।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে (Ukraine) ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তৈরি হয় অত্যন্ত জটিল সমীকরণ। ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার সূক্ষ্ম খেলায় নামতে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। তবে, রাশিয়া থেকে কমদামে অশোধিত তেল কেনা থামায়নি ভারত। আর এনিয়েই প্রবল আপত্তি জানিয়েছে, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মতো পশ্চিমের দেশগুলি। পুতিন প্রশাসনের ‘আগ্রাসনের’ নিন্দা করার জন্য মোদি সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছে আমেরিকাও। কিন্তু ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি দিল্লি। হোয়াইট হাউসকে স্পষ্ট বার্তায় সাউথ ব্লক জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক একদিনে তৈরি হয়নি। আমেরিকার সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর অর্থ পুরনো বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছেদ নয়।
এই বিষয়ে সোমবার বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর বলেন, “এতদিন পশ্চিমের দেশগুলিই রাশিয়ার বাণিজ্য সহযোগী ছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার এশিয়ার দিকে নজর দিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধের আগে আমাদের (দিল্লি-মস্কো) দ্বীপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের। গত বছর তা প্রায় তিণগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আমি মনে করি, তারা (রাশিয়া) অন্য দেশের সঙ্গে কী করছে তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশের স্বার্থে (রাশিয়ার সঙ্গে) আমাদের সম্পর্ক ভাল রাখা জরুরি।”
[আরও পড়ুন: আচমকাই পাকিস্তানে জ্যাক মা, চিনা ধনকুবেরের ঝটিকা সফরের কারণ ঘিরে তুঙ্গে জল্পনা]
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে , মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চেয়েছেন, চাপও সৃষ্টি করেছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষ নেওয়ার পাশাপাশি ‘যুদ্ধবাজ’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারত তার অবস্থান স্পষ্ট করুক। ভারত তা করেনি। একবছর কেটে গেল, ভারত একবারও রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শরিকও হয়নি। উল্টে সস্তায় বিপুল তেল কিনে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সাহায্য করছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রর ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে‘এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম’ কেনার সিদ্ধান্তেও অটল। যুক্তরাষ্ট্রকে সোজাসাপটা জানিয়েছে, সম্পর্ক একদিনে তৈরি হয় না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সেই সোভিয়েত আমল থেকে। কালের নিয়মে সেই বন্ধন পোক্ত হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অর্থ রাশিয়াকে ত্যাগ করা নয়।