সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাঙাচোরা ঘরে একটি শিশুর ছবি হাতে এক অশীতিপর বৃদ্ধ বসে রয়েছেন। তাঁর মাথায় সাদা পাগড়ি। চোখ ছলছল। ছবির সঙ্গে একখানা ভিডিও ঘুরছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেও ফুটে উঠেছে বৃদ্ধের দুর্দশার ছবি। আর তাঁর পরিচয়? সেটা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। বৃদ্ধ হলেন ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহর দাদু।
নাতি টিম ইন্ডিয়ার দলের প্রথম একাদশের ক্রিকেটার। অথচ দাদু সন্তোখ সিং বুমরাহর দিকে চোখ তুলে তাকানো যায় না। এ ছবি দেখার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নাতি বিশ্ব ক্রিকেটের এমন উচ্চতায় থাকা সত্ত্বেও দাদুর এ হেন দুর্দশা কেন? নানা দিক থেকে খোঁজ নিয়ে মিলল উত্তর। জানা গেল, কীভাবে এমন দুর্দশার মধ্যে পড়তে হল সন্তোখকে। জানা গেল, কীভাবে আহমেদাবাদের এলাহি জীবন থেকে উত্তরাখণ্ডের উধম সিং নগরের ভাড়া বাড়িতে এসে পড়লেন তিনি। যে কাহিনি হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য থেকে কোনও অংশে কম নয়।
[‘মুখ বন্ধ রাখলেই কোহলিদের কোচ হওয়ার সুযোগ পাবেন শেহবাগ’]
একটা সময় সন্তোখ সিং বুমরাহর বড় ব্যবসা ছিল। ছেলে জসবীর সিং অর্থাৎ জসপ্রিৎ বুমরাহর বাবা সেই ব্যবসার দেখাশোনা করতেন। তিনটি কারখানার মালিক সন্তোখের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধির কোনও অভাব ছিল না। কিন্তু ছেলে জসবীর মারা যাওয়ার পরই সব এলেমেলো হয়ে যায়। জসবীর মারা যান ২০০১ সালে। ছেলের মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে যান সন্তোখ। ব্যবসা লাটে ওঠে। পাওনাদারদের তাগাদায় বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে বুমরাহর দাদুর। তিনটি কারখানা বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা মিটিয়ে তিনি বাড়ি ছাড়েন। ২০০৬-এ সন্তোখ চলে আসেন উত্তরাখণ্ডের উধম সিং নগরের দশ-বাই-বারো ভাড়া বাড়িতে। পলেস্তারা খসা এই ঘরখানাই এখন তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। উধম সিং নগরে এসেও তিনটি টেম্পো কিনেছিলেন সন্তোখ। ভেবেছিলেন, আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু সেবারও বড়সড় লোকসানের মুখে পড়েন। তিনটের মধ্যে দু’টো টেম্পো বিক্রি করতে হয়। এখন খরচ কমাতে নিজেই টেম্পো চালান। যদিও খুব স্বাভাবিকভাবে ৮৪ বছর বয়সে এসে টেম্পো চালানোর ধকল শরীর নিতে পারে না। কিন্তু জীবনের লড়াই লড়তে টেম্পোর স্টিয়ারিং আবার শক্ত হাতে ধরতে হয় তাঁকে। তবে নিজের জীবন নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই তাঁর।
ভাড়ার বাড়িতে একটা টিভি কিনেছেন সন্তোখ। নাতি বুমরাহর আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার খবর দেখেন তাতে। সময় হলে বুমরাহর বোলিংও দেখেন। গর্বে ছাতি ফুলে ওঠে। বুমরাহর ছবিতে চুমু খান। চোখ বেয়ে জল পড়ে। নিজের জীবন নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। শুধু শেষ বয়সে একবার নাতিকে জড়িয়ে ধরতে চান। দাদু সন্তোখের এই অবস্থার খবর রাখেন জসপ্রীত? জানা নেই।
The post জানেন, কেন এমন চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন বুমরাহর দাদু? appeared first on Sangbad Pratidin.