shono
Advertisement

করোনা কেড়েছে মাদলের বোল, লোকসংস্কৃতি উৎসব দূরে রেখেই দুর্গা বন্দনার প্রস্তুতি জঙ্গলমহলে

ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে চলছে মূর্তি গড়ার কাজ। The post করোনা কেড়েছে মাদলের বোল, লোকসংস্কৃতি উৎসব দূরে রেখেই দুর্গা বন্দনার প্রস্তুতি জঙ্গলমহলে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:33 PM Sep 27, 2020Updated: 06:35 PM Sep 27, 2020

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ পাঠাত চিঠি। তারপর পাতা নাচ, কাঠি নাচ, ঝুমুর গানের ঝাঁপি নিয়ে সপরিবার উমাকে স্বাগত জানাতে কোমর বাঁধতেন গ্রামের আট থেকে আশি – সক্কলে। মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে মেতে উঠতেন এক নির্মল আনন্দে। কিন্তু এ বছর যেন সেসব যেন হারিয়ে গিয়েছে। প্রকৃতিও কেমন বিষণ্ণ। মেঘপুঞ্জ আর দানা বাঁধছে না আকাশের গায়ে। নীরবে সরে সরে যাচ্ছে। আজ গ্রামের মানুষের মন ভাল
নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আদৌ লোক সংস্কৃতির বর্ণময়তায় শারদোৎসবে মেতে উঠতে পারবেন কিনা, সেই চিন্তা ছায়া ফেলছে এই আনন্দের সময়ে। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে এসব নিয়েই শুরু হয়েছে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) প্রস্তুতি।

Advertisement

বাঙালির সেরা উৎসবে জঙ্গলমহলের মানুষ গুলি পাঁচ দিন ধরে মেতে থাকেন ধামসা, মাদলের তালে। ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বেলপাহাড়ির সোন্দাপাড়া অঞ্চলের কেন্দাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজা গত দু’বছর ধরে আশেপাশের গ্রামের মানুষের মূল আকর্ষণ হয়ে আসছে। এবারও সেই উৎসাহে তেমন ভাঁটা পড়েনি। গ্রামের মধ্যেই শুরু হয়েছে প্রতিমা গড়ার প্রস্তুতি। খড়, মাটির লেপন দিয়ে ধীরে ধীরে মূর্ত হয়ে উঠছে মৃন্ময়ী। করোনার আতঙ্ককে দূরে সরিয়ে গ্রামের কচিকাঁচাদের আনন্দ যেন উপচে পড়ছে। প্রতিমা তৈরির স্থানে গ্রামের শিশুরা এক বিস্ময়ভরা চোখে দেখে চলেছে দশভুজার রূপদান।

[আরও পড়ুন: বিজেপিতে রদবদল নিয়ে ক্ষুব্ধ রাহুল সিনহা, মানভঞ্জনে আসরে নামলেন মুকুল রায়]

কেন্দাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজোর এবার তৃতীয় বর্ষ। গত তিন বছর আগে এই কেন্দাপাড়া গ্রামে হঠাৎ করেই শুরু হয়ে গিয়েছি দুর্গাপুজো। গ্রামের কমবয়সি ছেলেরা লক্ষ্য করেছিলেন, মহিলাদের বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে অঞ্জলি দিতে হয়, প্রতিমা দর্শন করতে হয়। গ্রামের বয়স্ক মানুষরা ঠাকুর দেখতে যেতে পারতেন না অত দূরে। এই বিষয়টি ভাবিয়েছিল গ্রামের কমবয়সিদের। তাঁরা গ্রামের বড়দের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের অনুমতি নিয়ে শুরু করে দিয়েছিল পুজো।

গ্রামের এই পুজায় হয়তো শহুরে জৌলুস নেই। নেই আলোর বাহার বা থিমের ঘনঘটা। কিন্তু রয়েছে প্রাণের টান, সম্মিলিত প্রয়াস। গ্রামের এই পুজোর আরও
একটি বৈশিষ্ট্য এই যে গ্রামের ছেলেরা চাঁদা তোলার জন্য অন্য গ্রামে যায় না। এখানে প্রায় তিনশোটি পরিবার। তাঁদের সামর্থ অনুযায়ী তাঁরা চাঁদা দেন। আর সেই চাঁদাতেই গ্রামের দুর্গাপুজো ঘিরে মেতে ওঠেন সকলে। গ্রামের সকলের যোগদানই এই পূজার মূল ভিত। আর পূজার কটা দিন সবথেকে বড় আকর্ষণ, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির (Folk Programmes) উপস্থাপনা – গানবাজনা, নৃত্য।

[আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে দলীয় কোন্দল! রাস্তা তৈরি নিয়ে জামালপুরে তৃণমূল বনাম তৃণমূল দ্বন্দ্ব]

গ্রামবাসীরা বলেন, তাঁদের পুজায় নামীদামি শিল্পীদের তাঁরা আনতে পারেন না। কিন্তু স্থানীয় শিল্পীদের দরাজ গলায় গান, প্রাণবন্ত নাচ একেবারে অন্তর থেকে মাতিয়ে তোলেন সকলকে। রাঙামেটা, ডড়রা, সীতাপুর, মধুপুর, মাছকাঁদনা-সহ আশেপাশের অন্যান্য গ্রামের প্রচুর মানুষজন ভিড় করেন কেন্দাপাড়া গ্রামের দুর্গাপূজা দেখতে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে এবার খোলামেলা মণ্ডপ হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে গ্রামের মানুষে একটা আক্ষেপ। এবার হয়তো তাঁদের মনপসন্দ লোকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না। পূজা কমিটির অন্যতম সদস্য কমল কুমার পাল বলছেন, “এবার সর্বিক পরিস্থিতি একটু আলাদা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি আদৌ পাব কিনা জানি না। আমাদের পুজোর মূল আকর্ষণ হল লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান। আশেপাশের গ্রামের প্রচুর মানুষ আসেন দেখতে। এবার হয়তো হবে না। তাই মনখারাপ গ্রামের মানুষদের।”

ছবি: প্রতিম মৈত্র।

The post করোনা কেড়েছে মাদলের বোল, লোকসংস্কৃতি উৎসব দূরে রেখেই দুর্গা বন্দনার প্রস্তুতি জঙ্গলমহলে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার