স্টাফ রিপোর্টার: দু’সপ্তাহ আগেই আদালতে দাঁড়িয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিচারককে বলেছিলেন, ‘‘আর বিচার চাই না। ৩০০ দিনের পর কী বিচার হচ্ছে বুঝেছি। আপনি আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’’ মঙ্গলবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উষ্মা ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্য ও যে ভাষা তিনি ব্যবহার করেছেন, তা আদালতের পক্ষে অপমানজনক। এটা বুঝতে হবে যে, সব ক্ষেত্রে জামিন দেওয়া সম্ভব নয়।’’
পার্থর হয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাঁর আইনজীবী। যদিও আদালত থেকে বের হওয়ার সময় এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পার্থ বলেন, ‘‘আমি কোনওদিনই আদালতকে অবমাননা করিনি। করবও না।’’ এদিন আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে গ্রুপ সি ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, নীলাদ্রি দাস, চন্দন মণ্ডল ও অশোককুমার সাহাকে তোলা হয়। অসুস্থ থাকার কারণে শান্তিপ্রসাদ সিংহকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পেশ করা হয়।
[আরও পড়ুন: মুসলিম তরুণীকে প্রেমের নৃশংস ‘শাস্তি’! যুবককে খুন করে আট টুকরো করা হল দেহ]
অভিযুক্তদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত, বিপ্লব গোস্বামী, সেলিম রহমান ও অন্যরা তাঁদের জামিনের আবেদন করেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তদের ২৭ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃত ‘নাইসা’র প্রাক্তন কর্তা নীলাদ্রি দাস আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে চান। তাঁর আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত এদিন এই ব্যাপারে আবেদন জানান। বিচারকের নির্দেশ, প্রথমে সিবিআই নীলাদ্রি দাসের বয়ান নেবে। প্রেসিডেন্সি জেলে বয়ান নেওয়ার সময় অভিযুক্তর আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন। সূত্রের খবর, এরপর আদালতে গোপন জবানবন্দির বিষয়টি বিচার্য হবে। বিচারক সিবিআইকে বলেন, অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই বয়স্ক। তাঁরা শারীরিকভাবে অসুস্থ। সিবিআইয়ের দায়িত্ব মামলার প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শেষ করা।
গত ৩০ মে পার্থকে আদালতে তোলা হলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। এদিন বিচারক পার্থর আইনজীবীকে বলেন, আগের দিন আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা বলেছেন, আদালতের পক্ষে তা রীতিমতো অপমানজনক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আর বিচার চাই না। কী বিচার হচ্ছে বুঝেছি।’’ যেখানে আইনজীবী আবেদন করেছেন, সেখানে তিনি কীভাবে কোনও পদ্ধতি না মেনে নিজেই আবেদন জানান? একজন অভিযুক্ত আদালতকে কিছু বলতে পারেন। কিন্তু যে ভাষায় তিনি বলেছেন, তা আদালতের পক্ষে অপমানজনক। এটা বুঝতে হবে যে, সব ক্ষেত্রে জামিন দেওয়া যায় না। সেখানে তিনি বিচার পাচ্ছেন না, কীভাবে বলতে পারেন?
[আরও পড়ুন: অজান্তে যৌনকর্মীর সঙ্গে লিভ-ইন! আত্মহত্যার চেষ্টা ‘দ্য কপিল শর্মা শো’-এর অভিনেতার]
পার্থর আইনজীবী বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছুই বলেননি। হতাশায় বলেছেন। বিচারক বলেন, পার্থবাবুর বয়স হয়েছে। তিনি তাঁকে সম্মান করেন। তাই তিনি তখন কিছু বলেননি। তিনি কিছু মনে করেননি বলে জানান বিচারক। এদিকে, নীলাদ্রি দাসের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, প্রথমে সাক্ষী করার পরও যে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়, সিবিআইয়ের কাছে তার তথ্য আছে। প্রত্যেক অভিযুক্তর আলাদা ভূমিকা রয়েছে। এই দুর্নীতিতে আর কতজন রয়েছে, তা সিবিআইয়ের জানা প্রয়োজন।