ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই জুনিয়র চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত! বিশেষ করে ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কাছে শনিবার ছিল 'রেড লেটার ডে'। কয়েক হাত দূরে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে, তাঁদেরই ধরনামঞ্চে। বলছেন, "আমি আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা মানুষ। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই।" এই বক্তব্যের পর জেলার ছাত্ররা ধরনামঞ্চ ছেড়ে অনেকেই বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন।
মঞ্চ থেকেই অভিভাবক সুলভ ঢঙে জানিয়েছিলেন, মুখমন্ত্রী নন, দিদি হিসেবে এসেছেন তিনি। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবি সহানুভূতির সঙ্গে ভেবে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন। মমতার সেই 'মাস্টার স্ট্রোকে' কার্যত ছত্রখান জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন! তাঁদের একটি জিবি বৈঠক চলছে বটে কিন্তু সূত্র বলছে, তমলুক, বর্ধমান, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ এবং উত্তরবঙ্গ থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে ব্যাগ গোছাতে শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ি ফিরে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র!
শনিবার দুপুর ঘড়িতে ১টা। হঠাৎই আন্দোলনকারীদের কাছে খবর আসে ধরনাস্থলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। খবর আসা আর মমতার পৌঁছনোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান মোটে মিনিট পাঁচেক। ফলে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, আন্দোলনকারীদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা ঠিক করার সময়ই পাননি আন্দোলনকারীরা। মুখ্যমন্ত্রী সটান ধরনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে যান। আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতোকে নিয়ে মাইক হাতে মঞ্চে উঠে পড়েন। বক্তব্য রাখেন। বলেন, "আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আপনারা আমার ভাইবোন। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। তোমাদের যন্ত্রণা আমি বুঝি। আন্দোলনের সমব্যথী।" এদিন তিনি যেভাবে প্রশাসনিক প্রধান থেকে আন্দোলনকারীদের 'দিদি' হয়ে উঠলেন তা দেখে ইন্টার্ন ডাক্তাররা কার্যত অবাক। ভিড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, এ কার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম আমরা!
ধরনামঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, সমিতিতে কী চলত, তিনি জানতেন না। তাঁকে কেউ জানাননি। রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা কার্যত ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে! এবার থেকে রোগী কল্যাণ সমিতির মাথায় রাজনৈতিক নেতার বদলে থাকবেন মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল। সদস্য হবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ফলে তাঁদের সঙ্গে অধ্যক্ষ যোগাযোগ আরও নিবিড় হবে। রোগীরাও সমস্যা নিয়ে অধ্য়ক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সেখানে কোনও তৃতীয় ব্যক্তি থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই সমস্ত ঘোষণার পরই উঠে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন।
রুমেলিকা কুমার, দেবাশিস হালদারের মতো এসইউসিআই ডাক্তার নেতারা ইতিমধ্যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা কেউই আর ছাত্র নন। বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মোটা টাকা মাস মাইনে পান। তাঁরাই জুনিয়র চিকিৎসকদের 'উসকানি' দিচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, শুক্রবার রাতেও চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত নন এমন বামনেতারা গোটা রাত কাটিয়ে গিয়েছেন ধরনাস্থলে। আলোচনা করেছেন আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ নিয়ে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর এই সমস্ত কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
সবমিলিয়ে গোটা আন্দোলন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। সামনেই পিজিটির পড়ুয়াদের পরীক্ষা। ফলে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন নাকি ফিরে যাবেন, তা নিয়েই তুঙ্গে বিতর্ক।