শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর (Mimi Chakraborty) পরিবারের পুজোয় এবার থেকে বলি বন্ধ। ৩০০ বছর পর এবারই মৃন্ময়ী থেকে কষ্টিপাথরে প্রতিষ্ঠিত হবেন মা ভদ্রকালী। মিমি আসতে পারেন বলে খবর রটলেও পরিবারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারছেন না তারকা সাংসদ।
জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পান্ডাপাড়া কালী বাড়ি। কথিত আছে বৈকন্ঠপুরের রাজ পরিবারের পুজো পরিচালনার জন্য পুরী থেকে পান্ডা নিয়ে এসেছিলেন রাজা দর্পদেব রায়। তাঁদের থাকার জন্য জমির ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। সেই কারণে ওই এলাকার নাম হয় পান্ডাপাড়া। এলাকার জোতদার ছিলেন ভৈরবনাথ চক্রবর্তী। তার বর্তমান উত্তরাধিকারী মিমির মামা রাম চক্রবর্তী। তিনি জানান, ৩০০ বছর আগে ব্রাহ্মণ দিঘির বিপরীতে ভদ্রাকালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভৈরবনাথ চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন কালীর সাধক। এখানে শিবের বদলে সাপের উপর দাঁড়িয়ে মা ভদ্রকালী। পরবর্তীতে এই মন্দির ও পুজো পরিচালনার দায়িত্ব সেবাইতের উপর দিয়েছিলেন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: সেনার উর্দিতে দুরন্ত ভিকি, ‘স্যাম বাহাদুর’-এর ট্রেলারে ফিরল দেশের বীর যোদ্ধার স্মৃতি]
এই পাড়াতেই মিমির ছেলেবেলা কেটেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি। এর পর মিমির কলকাতায় আসা। সিনেমার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া। তার পর পাড়ায় মিমি একটি ফ্যানক্লাবও গড়ে ওঠে। ক্লাবের সম্পাদক অভিজিৎ দাস জানান, লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই মন্দিরে এসে পুজো দেন মিমি। বাড়িতে এলে একবার হলেও মন্দিরে এসে মাথা ঠেকান নায়িকা। মন্দিরের বর্তমান সেবাইতের দায়িত্বে রয়েছেন সুব্রত চক্রবর্তী। জানান, দু-বছর অন্তর অন্তর মন্দিরে মৃন্ময়ী মূর্তির পরিবর্তন করা হতো। তিনশো বছরের পুরনো এই মন্দিরে এভাবেই পুজো হয়ে আসছিল। এ বছর কষ্টিপাথরের প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তা হল বলি বন্ধের সিদ্ধান্ত। কালী পুজোর (Kali Puja 2023) রাতে একাধিক পায়রা এবং পাঠা বলি দেওয়া হত মন্দিরে।
অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার প্রতীক হিসেবে বলি দেওয়া হত। এই রীতি বজায় রাখতে গিয়ে নিরীহ প্রাণীদের হাঁড়িকাঠের সামনে দাঁড় করানোর দৃশ্য মেনে নিতে পারছিলেন না এই প্রজন্মের অনেকেই। সকলের মতকে মান্যতা দিয়েই শেষ পর্যন্ত বলি বন্ধের সিদ্ধান্ত। মন্দির কমিটির এই সিদ্ধান্ত কে মেনে নিয়েছেন মিমির পরিবারের সদস্যরা। অভিনেত্রীর মামা রাম চক্রবর্তীর বক্তব্য, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। আর সেই পরিবর্তন মেনেও নিতে হয়। সবটাই হয় মা ভদ্রকালীর ইচ্ছেয়। তাঁর ইচ্ছের বাইরে কিছুই নয়।”