স্টাফ রিপোর্টার: ‘দেশকে অন্দর আজাদি, ঘরকে অন্দর আজাদি’৷
‘আজাদি’-র অধিকার প্রসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির অন্দরেও বিদ্রোহের বীজ বপন করে গেলেন বাম ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার৷ সিপিআইয়ের সহযোগী ছাত্র ও যুব সংগঠনের সভায় তাঁর বার্তা, মন খুলে পার্টির নেতাদের সমালোচনা করুন৷ এখন নেতারা আর জেলে যান না, কেউ তাঁদের জুতোও ছোড়েন না৷ নেতারা শুধু ঠান্ডাঘরে বসে তত্ত্বের কথা বলেন৷ এই কারণেই সাধারণ মানুষ আর তাঁদের পিছনে থাকেন না৷ সিপিএম তো বটেই, সহযোগী দলগুলিকেও প্রতিবাদের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কানহাইয়া৷ বাম নেতাদের প্রায় তুলোধোনা করলেন৷ শুক্রবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের নির্বাচন৷ সংসদের সভাপতি হিসাবে বৃহস্পতিবার কলকাতায় শেষ বক্তব্য পেশ করলেন কানহাইয়া৷ মহাজাতি সদনের অডিটোরিয়াম এবং বাইরে থিকথিকে ভিড়৷ কানহাইয়ার বক্তব্যে আরএসএস এবং মোদি-বিরোধিতা নতুন নয়৷ এদিন যা প্রথম শোনা গেল তা হল, বাম নেতাদের সমালোচনা৷ বামফ্রন্ট সরকারের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ যে ভুল ছিল তা সোচ্চারে জানিয়েছেন বিহারের বেগুসরাইয়ের ‘বিস্ময় বালক’৷ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ কৃষকের অধিকারের জন্য মমতার লড়াইকে সমর্থন করেছেন দেশের সর্বাধিক আলোচিত ছাত্রনেতা৷
এআইএসএফ ও এআইওয়াইএফ-এর গণ কনভেনশনে বক্তব্য পেশ করেন কানহাইয়া৷ শুরুতেই তিনি বলেন, “আমাকে কেউ কালো পতাকা দেখালে বা জুতো ছুড়লে প্রতিবাদ করবেন না৷ যাঁরা তা করবেন তা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷” মঞ্চে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পন্ডা-সহ রাজ্য নেতৃত্ব উপস্হিত৷ এই প্রথম কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসলেন জেএনইউ ছাত্র সংসদ সভাপতি৷ ছাত্রনেতার বক্তব্যে দৃশ্যত অস্বস্তিতে পড়েন পার্টির নেতারা৷ সভামঞ্চে মহিলা প্রতিনিধি না থাকা নিয়েও কটাক্ষ করেন কানহাইয়া৷ তিনি বলেন, “বামপন্থীরা সমানাধিকারের কথা বলেন৷ কিন্তু এই মঞ্চে একজনও মহিলা নেই৷ এমন বিষয়ে আমাদের খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত৷” বক্তব্যের শেষে কানহাইয়াকে প্রশ্ন করা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কি তিনি ‘বামপন্থী’ বলে মনে করেন? উত্তর খানিকটা এড়িয়ে তিনি বলেন, “বামপন্থী শব্দের উৎপত্তির সময় মার্কসবাদ বা কমিউনিস্ট শব্দ শোনা যায়নি৷ আমি মনে করি যে বা যাঁরা সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাঁরা বামপন্থী৷ কৃষকের স্বার্থে লড়াইয়ের জন্য মমতা দিদিকে অভিনন্দন৷ কিন্তু তারপর কি হল? তাঁর আমলে কি কৃষক আত্মহত্যা করেননি? এ রাজ্যের মানুষের মুখে হাসি ফোটার অপেক্ষায় থাকলাম৷”
সিপিএমের উদ্যোগেই এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়৷ সে প্রসঙ্গে কানহাইয়া বলেন, “ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইতে জোট হতে পারে৷ কিন্তু ভোটে জেতার জন্য কখনওই জোট করা উচিত নয়৷ সিপিএম কেন কংগ্রেসের সঙ্গে গেল তা কমরেড সীতারাম ইয়েচুরিকে জিজ্ঞেস করা উচিত৷” নাম না করে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের উদ্দেশে বলেন, “এক পুরনো কমরেড বিজেপিকে ফ্যাসিস্ট বলতে রাজি নন৷ তিনি জেএনইউতে পড়েছেন৷ তাঁর উদ্দেশে বলব, আপনি লড়তে না চাইলে অবসর নিয়ে নিউইয়র্ক চলে যান৷” জেএনইউতে এআইএসএফ এবং এসএফআই একযোগে লড়ছে৷ কিন্তু এদিন সভামঞ্চে কোনও এসএফআই প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি৷
কানহাইয়ার বাবা অসুস্থ৷ পরিবারে একমাত্র রোজগেরে বলতে তাঁর মা মিনাদেবী৷ মহাজাতি সদন ছাড়ার আগে তারকা ছাত্র নেতা সাফ জানিয়ে দেন, “উচ্চশিক্ষায় আমি পরিবারের প্রথম প্রজন্ম৷ আমার মা অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ করেন৷ দেশের মানুষের টাকায় আমি ভরতুকিতে পিএইচডি করছি৷ আমাদের মহল্লা থেকে প্রথম আমি জেএনইউতে পড়ছি৷ পরিবারের প্রতি এবং গ্রামের প্রতি আমার কর্তব্য রয়েছে৷ রাজনীতিতে যোগ দেওয়া আমার মতো মানুষের পক্ষে বিলাসিতা৷”
এদিন কানহাইয়াকে কালো পতাকা দেখায় বিজেপির যুব মোর্চা৷ চারটি পয়েন্টে বিক্ষোভ দেখান মোর্চা সমর্থকরা৷ মহাজাতি সদনে তাঁর ঢোকার সময় পচা ডিমও ছোড়া হয়৷ তবে তা কানহাইয়ার গায়ে লাগেনি৷ পুলিশ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়৷ মোর্চার রাজ্য সভাপতি তুষারকান্তি ঘোষকে গ্রেফতারের পর কিছুক্ষণ মহাত্মা গান্ধী রোড অবরোধ করেন৷ পুলিশ চার মহিলা-সহ ১২জন মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতার করেছে৷ যুব মোর্চা দাবি করেছে, পুলিশের লাঠি চার্জে তাঁদের কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন৷
The post কানহাইয়ার মুখে প্রশংসিত মমতা, বিদ্ধ বাম appeared first on Sangbad Pratidin.