অর্ণব আইচ: কসবায় (Kasba) বিএমডব্লুর ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এল কলকাতায় পরপর ঘটে যাওয়া অডি, মার্সেডিস ও জাগুয়ারের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গ। শনিবার আলিপুর আদালতে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য এই প্রসঙ্গ তুললেন সরকারি আইনজীবী। গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। এদিকে, কসবায় যে বিএমডব্লু গাড়িটির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর, সেই গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ। ঘটনাস্থলে থাকা অডি গাড়িটি থেকে উদ্ধার হয়েছে মদের বোতল ও গ্লাস। ঘটনাস্থলে এক তরুণীও ছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই তরুণীর কী ভূমিকা ছিল, তা জানতে তাঁকেও পুলিশ জেরা করবে।
শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ কলকাতার কসবার রাজডাঙা মেন রোডে একটি হুক্কাবারের সামনে প্রচণ্ড মদ্যপানের পর ব্যবসায়ী বন্ধুদের মধ্যে বচসা। তারই জেরে ব্যবসায়ী বন্ধু সুমিত আগরওয়ালের অডি গাড়িতে নিজের বিএমডব্লু দিয়ে ধাক্কা দেন অন্য ব্যবসায়ী রাজদীপ শর্মা। ধাক্কার সময় বিএমডব্লু গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে উদয় বিশ্বাস নামে এক পুলিশকর্মী সহ দু’জন গুরুতর আহত হন। মৃত্যু হয় পথচারী তপন দে-র। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রাজদীপ শর্মা, তাঁর বন্ধু সুমিত আগরওয়াল, দুই সঙ্গী চান্দের পাল ও অভিষেক দাস। এ ছাড়াও হুক্কাবারের মালিক রোহিত রাজপুতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এদিন পাঁচজনকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী তাঁর আবেদনে জানান, প্রচণ্ড গতিতে এসে বিএমডব্লু গাড়ি ও অন্য আরও তিনটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় একজনের। গুরুতর আহত পুলিশকর্মী সহ দু’জন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারি আইনজীবী কলকাতায় ঘটে যাওয়া পুরনো পথ দুর্ঘটনাগুলির কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি আদালতর কাছে অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন। ওই চারজনের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিচ্ছাকৃত খুন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ। পালটা অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানান। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে দুই ব্যবসায়ী ও তাঁদের দুই সঙ্গীকে ১৭ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের তলবে হাজির হলেও সঙ্গে নেই রিপোর্ট, মুখ্যসচিব, ডিজির উপর ‘বিরক্ত’ ধনকড়]
এদিকে, সরকারি আইন লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সময়ের বাইরে হুক্কাবার তথা ধাবা খোলা রাখার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ধাবার মালিক রোহিত রাজপুত। ওই হুক্কাবারে মদ্যপান করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। রোহিতের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। তবে ওই হুক্কাবার যাতে খোলা না হয়, তার জন্য আবেদন জানানো হয়। কসবা থানার পক্ষ থেকেও লালবাজারকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ওই হুক্কাবারের লাইসেন্স বাতিল করতে। তদন্তে নেমে আবার পুলিশ জানতে পেরেছে যে, অভিযুক্তরা আগে অন্য জায়গায় পার্টি করেছিলেন। এরপর ফের ওই হুক্কাবারে গিয়ে মদ্যপান করেন। সুমিতের অডি গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে মদের বোতল ও গ্লাস। ফলে তিনি কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে গাড়ির ভিতর মদ্যপান করেছিলেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, রাজদীপ শর্মার গাড়ির ভিতর তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছে। তার ফলে রাজদীপরা অন্য কোনও ধরনের মাদক নিতেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এই ব্যাপারে অভিযুক্তদের পরীক্ষা করেও দেখা হতে পারে। গাড়িতে অন্য কোনও নেশার বস্তু রাখা ছিল কি না, সেই ব্যাপারেও তদন্ত হচ্ছে। রাজদীপ ও সুমিতের সঙ্গে এক তরুণীও ছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই তরুণীকে জেরা করে এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানার চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।