অর্ণব আইচ: কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের উপর হামলার ছকের পিছনে আরও এক মাস্টারমাইন্ডের সন্ধান পেলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। বিহারের কুখ্যাত অপরাধী ইকবালের সন্ধান করতে গিয়েই গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, এই হামলার ছকের পিছনে রয়েছে পাটনার বেউড় জেল ফেরত এক খুনের আসামী।
বেউড় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুজোর আগেই সে চলে আসে কলকাতায়। কলকাতায় বসেই মূল অভিযুক্ত গুলজার তথা আফরোজের সঙ্গে বসে এই খুনের ছক কষেছিল সে। ওই ব্যক্তিই কলকাতায় নিয়ে এসেছিল ৭ এমএম ও ৯ এমএম পিস্তল। ওই ব্যক্তিই বিহারের কুখ্যাত পাপ্পু গ্যাংয়ের এক মাথা ও পাপ্পু এবং গুলজারের মধ্যে মিডল ম্যান হিসাবে কাজ করছিল বলে অভিযোগ লালবাজারের গোয়েন্দাদের। এবার বিহারে ওই ব্যক্তির সন্ধান চলছে। এদিকে, যে স্কুটি করে সুশান্ত ঘোষকে গুলি চালাতে এসেছিল সুপারি কিলার যুবরাজ সিং, এলাকার বাসিন্দাদের খবরের ভিত্তিতে সেটি বন্ডেল গেটের পিছন দিকের একটি গলি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারির পর থেকে জেরার মুখে গুলজার পুলিশকে বিভ্রান্ত করে চলেছে বলে অভিযোগ পুলিশের। এমনকী, মোবাইলে সুপারি কিলারদের নাম আড়াল করতে তাদের জায়গায় মহিলাদের নাম ‘সেভ’ করে রাখত গুলজার।
কসবা-কাণ্ডের পর থেকেই তদন্তে ইকবাল নামে এক চক্রীর নাম উঠে আসছিল। প্রথমে গুলজার নিজেকেই ইকবাল বলে পরিচয় দেয়। এর পর জেরার মুখে গুলজার দাবি করে যে, মুঙ্গেরের বাসিন্দা ইকবাল অস্ত্র ও সুপারি কিলার সরবরাহ করে। তার মোবাইলেও সেভ করা ছিল ‘ইকবাল’-এর নম্বর। কিন্তু বিহারে তল্লাশি চালিয়ে কোনও ইকবালের সন্ধান মেলেনি। এ ছাড়াও মোবাইলে থাকা ‘ইকবাল’-এর মোবাইলের সূত্র ধরে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। গুলজারকে জেরা করে মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। গুলজার স্বীকার করে যে, ‘ইকবাল’ আসলে বেউড় জেল ফেরত এক আসামী। পাটনায় এক ব্যবসায়ীকে খুন করে জেলে যায় সে। বেউড় জেলে বসেই সে অপরাধের নেটওয়ার্ক চালাত। বিহারের পাপ্পু চৌধুরি গ্যাংয়ের ওই মাথা বেউড় জেলে থাকার সময়ই তার সঙ্গে গুলজার যোগাযোগ করে। জামিন পেয়ে বেউড় জেল থেকে বেরিয়েই সে কলকাতায় আসে। সে দুর্গাপুজোর আগে কলকাতায় এসে গুলজারের সঙ্গে প্ল্যান করতে থাকে। মুঙ্গের থেকে অস্ত্র নিয়ে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে সুপারি কিলার চাঁদু, সুশীল, যুবরাজদেরও। জেরায় গুলজারের দাবি, সে পাপ্পু চৌধুরিকে চেনে না। তবে জেল ফেরত ব্যক্তিটিই পাপ্পু ও তার মধ্যস্ততা করে।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, যে স্কুটি করে এসে কাউন্সিলরের উপর হামলা চালানো হয়, তার চালক বন্ডেল গেটের পিছনদিকের গলিতে স্কুটি রেখে বালিগঞ্জের দিকে হেঁটে চলে যায়। বন্ডেল রোড এলাকায় বন্ধ করে দেয় মোবাইল। এর পর সে ট্রেনে উঠে কোথায় গিয়েছে, সেদিকেই নজর রাখছে পুলিশ। সেকেন্ড হ্যান্ড স্কুটি কার, তা স্পষ্ট করে না জানা গেলেও বন্ডেল গেট এলাকার বাসিন্দারা দু’দিন আগেই সেটি রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে জানান। এদিন সেটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।