সুব্রত বিশ্বাস: ‘অব ইনসাফ মিলেগা। মোদিজি নে জো কিয়া হ্যায় ও আচ্ছাই হোগা।’ কাশ্মীর থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি কিলোমিটার দূরে কলকাতায় বসে সেখানকার সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র সরকারের প্রচেষ্টাকে এভাবেই
দেখলেন বছর ত্রিশের ইন্দু খান। কুপওয়ারা জেলার লোলাও গ্রামের ইন্দু বছর দু’য়েক ধরে কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের কাশ্মীরি শালের দোকান সামলাচ্ছেন। দু’বছর দেশে না গেলেও নিয়মিত ফোনে পরিস্থিতি নিয়ে
আলোচনা হয় বাড়ির সঙ্গে। তবে রবিবার রাত থেকে ফোনের লাইন, নেট কিছুই পাননি। ফলে যোগাযোগ হয়নি বাড়ির সঙ্গে। সেখানে বাবা, মা, ভাই, বোন সবাই রয়েছেন। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ শেষ করে কলকাতায় আসেন
শালের দোকানের দায়িত্ব নিয়ে।
[আরও পড়ুন: সন্ধে থেকে সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে খুনি, সিসিটিভিতেই নেতাজিনগর হত্যার রহস্য ফাঁস]
বর্তমানে কলকাতায় থাকলেও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলে তিনি খুশি। তাঁর কথায়, বেকারদের চাকরির সংস্থান হবে, হোটেল থেকে পর্যটনের ব্যবসা উন্নতি হবে। চাকরি পাবে বেকাররা। বেকারিত্ব ঘুচলে কেউ আর সন্ত্রাসের পথে যাবে না। ঢিল ছোঁড়ার বদনাম থেকে মুক্ত হবে। এটা তো একটা বড় পাওনার মধ্যে পড়ছে। তাঁরই সহকর্মী একই গ্রামের আজাদের কথায়, এখন কাশ্মীরের যুব সমাজ পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি খুব একটা জোটাতে পারেন না। প্রাইভেট স্কুল, কল সেন্টার, শাল কারখানায় কাজ করতে হয়। তাও যথেষ্ট নয়। তাতে না হলে বেকার। যার সংখ্যা বাড়ছে। কৃষি বলতে আপেল, পিনাটস, ধান ইত্যাদি। তাও কতটা? আজাদও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত করায় খুশি।
কলকাতায় বসে বহু কাশ্মীরি আশাবাদী হলেও অনেকে আবার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। কাশ্মীরি শাল বাজারের একটি দোকানের মালিকের স্পষ্ট কথা, ৩৭০ ধারা কী, তা আমরা জানি না। কী আছে তাতে, তার কতটা মানা হবে
সব কিছুই এখন ধোঁয়াশার মধ্যে। যতদিন না সব কিছু কার্যকর হয় ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ৩২ বছর কলকাতায় রয়েছি। সমস্যা নেই এখানে। কাশ্মীরের সমস্যা ১৯৩১
সাল থেকে রয়ে গিয়েছে। ৮৯ সাল থেকে তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। সরকারের কাছে এমন কোনও যাদুদণ্ড নেই যে সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা মিটে যাবে।
[আরও পড়ুন: পোস্তায় ৭০ লক্ষ লুটের মাস্টারমাইন্ড আইনজীবী, মুম্বইতে ফূর্তি করে ফিরে জালে দুই সঙ্গী]
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে সদর স্ট্রিটে কাশ্মীরি শালের দোকান সামলাচ্ছেন মুজফ্ফর আহমেদ। তিনিও মনে করেন, ৩৭০ ধারা বাতিল করে সরকার উন্নয়নের পথে যেতে চাইছে। কেন্দ্রশাসিত হলে সমস্যা সমাধানের পথ
নিশ্চয়ই খুলে যাবে। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কী হবে, তার উপরই নির্ভর করছে বহু কিছু। তাঁর কথায়, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নীতির উপরই নির্ভর করছে পরিস্থিতি। তবে মোটের উপর ভালই বলে মনে করেছেন কাশ্মীরিবাসী কলকাতার শাল ব্যবসায়ীরা। সেখানকার অস্থির পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে বদলাবে। সেনাকর্মীদের দেখে ঢিল ছোঁড়ার মানসিকতা বিদায় নেবে, কাজে মত্ত হলে সময় কাটবে একেবারে সাবলীলভাবে। মানুষজন অন্য দিকে মন দিতে পারবেন না। তবে কাশ্মীরের গ্রামগুলির পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ, যত ঝামেলা শহরেই। লোলাও গ্রামের ইন্দু খান বলেন, গতকাল সকালে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘নিজেকে নিয়ে ভাবো। আমরা এখানে একেবারে ঠিক রয়েছি। সম্প্রতি কাশ্মীরে অসংখ্য সেনা পাঠানোর বিষয় নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা। উদ্বেগ বেড়েছে রবিবার রাত থেকে বাড়ির কোনও খবর না পাওয়ার জন্যও।’
The post ‘অব ইনসাফ মিলেগা’, আশায় বুক বাঁধছে কলকাতাবাসী কাশ্মীরি যুবরা appeared first on Sangbad Pratidin.