অভিরূপ দাস: জিনগত মিউটেশনের কারণে মায়ের জঠরে অসুস্থ ভ্রুণ। জানেও না পরিবার।
এমন অপ্রকৃতিস্থ ভ্রুণ খুঁজে দেবে পুরসভা। শুধু খুঁজে দেবে না, অভিভাবকদের পরামর্শ দেবে, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলে গর্ভপাত করিয়ে নিন।” চিকিৎসা পরিভাষায় এহেন পরার্মশের নাম ‘জেনেটিক কাউন্সেলিং’। তা শিখবেন কলকাতা পুরসভার মেডিক্যাল অফিসাররা। নতুন পাইলট প্রোজেক্টের জন্য হাত মেলাল পুরসভা আর ‘অরগাইনাইজেশন অফ রেয়ার ডিজিজ ইন্ডিয়া’ বা ওআরডিআই। যেখানে কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি কলকাতার কোথায় কত জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশু আছে তা খুঁজবে পুরসভা।
মোট সাত হাজার প্রকারের বিরল রোগ রয়েছে। সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর মোট যত জন শিশু জন্মাচ্ছে তার মধ্যে প্রায় ছ’শতাংশ এই ধরনের বিরল রোগ নিয়ে জন্মায়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ পাঁচ বছরে বয়সে পৌঁছনোর আগেই মারা যায়। মূলত এক বা একাধিক জিনের মিউটেশনের কারণে এ ধরণের অসুখ হয়। কোন পরীক্ষায় ধরা পড়ে অসুখ? জেনেটিক কাউন্সিলর দীপাঞ্জনা দত্ত জানিয়েছেন, ট্রিপল মার্কার ব্লাড টেস্ট-এর মতো রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে গর্ভস্থ ভ্রূণ জিনগত অসুখে আক্রান্ত কিনা। আগে থেকে জানতে পারলে যেমন দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। তেমনই সময়ের মধ্যে হলে গর্ভপাত করাতে পারেন মা-বাবা।
[আরও পড়ুন: ‘জমি নিয়ে থাকলে ফেরত দিন’, সন্দেশখালি গিয়ে অভিষেকের বার্তা শোনালেন সেচমন্ত্রী]
পশ্চিমবঙ্গ সরকার একাধিক সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করে। তার হদিশ জানে না অনেক অভাগা পরিবার। নয়া পাইলট প্রোজেক্টে এই সেতুবন্ধনের কাজটাও করবে কলকাতা পুরসভা। এদিন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, নতুন প্রোজেক্টটি একটি পাইলট প্রোজেক্ট। শুরু হচ্ছে ১০টি ওয়ার্ডে। ধীরে ধীরে পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডেই হবে তা। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সুব্রত রায়চৌধুরীর কথায়, এই প্রোজেক্টের দু’টি ভাগ স্ক্রিনিং আর ট্রেনিং। পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার আর আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে ওআরডিআই। এরপর পুরসভার কোন কোন ওয়ার্ডে জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশু রয়েছে তা খুঁজে বের করবে আশাকর্মীরা।
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, ১৪৪টি ওয়ার্ডে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে প্রসূতি যেমন আসেন, টিকা নেওয়ার জন্য সদ্যোজাতকে নিয়ে আসেন মায়েরাও। বিনামূল্যে তাঁদের কাউন্সেলিং করবে আশাকর্মীরা। কী কী প্রশ্ন করতে হবে তা শিখিয়ে দেবে ওআরডিআই। পুরো বিষয়টাই হবে নিখরচায়। এই মুহূর্তে শহরের অন্যতম জেনেটিক কাউন্সিলর দীপাঞ্জনা দত্ত জানিয়েছেন, কিছু প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমেই জানা যায় শিশুর ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম, উইলিয়াম সিনড্রোমের মতো জিনগত অসুখ রয়েছে কিনা। সেই প্রশ্নমালাগুলোই তুলে দেওয়া হবে আশাকর্মীদের হাতে। তাঁদের শেখানো হবে, কোন উত্তরে বুঝবেন শিশুটি আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক নয়। এই পাইলট প্রোজেক্টের নোডাল অফিসার কলকাতা পুরসভার ডেপুটি সিএমএইচও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উৎপল কাঞ্জি।
[আরও পড়ুন: কবে কার্যকর হবে নয়া দণ্ডসংহিতা আইন? লোকসভার আগে বড়সড় ঘোষণা কেন্দ্রের]
কী কী দেখবেন আশাকর্মীরা? বাচ্চার উচ্চতার বৃদ্ধি, ঠিকমতো মায়ের বুকের দুধ খেতে পারছে কিনা, প্রস্রাব হচ্ছে কি না। সবই প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নেবে আশাকর্মীরা। ঠিক হয়েছে ‘হাব অ্যান্ড স্পোক’ মডেলে, অনলাইনে শহরের আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে ওআরডিআই। দীপাঞ্জনা দত্ত জানিয়েছেন, অনেকেই জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এমআরবাঙুর, এসএসকেএমের মতো একাধিক হাসপাতালে নিখরচায় জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে। সেই সুবিধাটা পৌঁছে দিতে হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন, তৃণমূল নেত্রী প্রিয়দর্শিনী ঘোষ। শহরের জিনগত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. তপন মুখোপাধ্যায়, মুখ্য পতঙ্গবীদ ডা. দেবাশিস বিশ্বাস।