সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: কথায় কথায় বলা হয় – লক্ষ্মী মেয়ে। সে কি কেবলই উপমা নাকি সত্যিই বাড়ির মেয়েকে ‘লক্ষ্মী’র সমতুল্য মনে করেন অভিভাবকরা? এ নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) এক দম্পতি যা করলেন, তাতে অন্তত লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) দিন এই বিতর্ক ভুলে থাকাই সমুচিত কাজ। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন নিজেদের কন্যাকেই লক্ষ্মী রূপে আরাধনা করলেন তাঁরা। আর তাঁদের সেই অভিনব আরাধনার কথা ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। সকলেই তাঁদের ধন্য ধন্য করছেন। বলছেন, এটাই আসল ‘লক্ষ্মী’ পুজো।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে সারা বিশ্ব যখন ধনসম্পদ লাভের আশায় লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় ব্রতী, ঠিক সেই সময়েই নিজের সাড়ে চার বছর বয়সী একরত্তি শিশুকন্যাকে (Daughter) লক্ষ্মী রূপে সাজিয়ে ধর্মীয় রীতি মেনে পূজা করলে কৃষ্ণনগরের বাগচী দম্পতি। মা লক্ষ্মীর কাছে তাঁদের প্রার্থনা, পৃথিবী থেকে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের মতো অসামাজিক ঘটনা যেন আর না ঘটে। নাঘাটা এলাকার বাগচী পরিবারের ঠাকুর ঘরের সিংহাসনে মা লক্ষ্মীর মূর্তি রয়েছে। সেই মূর্তির সামনেই এই দিন নিজের শিশুকন্যা অরিত্রিকা বাগচীকে মা লক্ষ্মীর আদলে সজ্জিত করে পুরোহিত ডেকে নিজের কন্যাকে মাতৃরূপে পূজা (Worship) করলেন অর্জুন বাগচীর পরিবারের সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: ‘আমার নাম বলতে PA-কে চাপ দিচ্ছে’, ইডির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ সুজিত বসুর]
পরিবারের কর্তা অর্জুন বাগচীর স্ত্রী ঝুমা বলেন, মেয়ে সন্তানকে পরিবারের লক্ষ্মী হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও নারীকে মাতৃ শক্তির আধার রূপে মানা হয়। মূলত সেই কারণেই মা লক্ষ্মীর মৃন্ময়ী মূর্তির বদলে ঘরের মেয়েকেই তাঁরা লক্ষ্মী মাতা রূপে আরাধনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের মেয়েকে দেবী রূপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের মত অমানবিক ঘটনা চিরতরের জন্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। ঝুমাদেবী আরও জানান, মেয়ের জন্মের পর থেকে তাঁদের পরিবারের উন্নতি হয়েছে। তাই মেয়েই তাঁদের কাছে ‘লক্ষ্মী’।
[আরও পড়ুন: বীরভূমে স্টোনম্যান! ত্রিকোণ প্রেমের জটিলতায় যুবকের মাথা থেঁতলে খুনের অভিযোগ]
অরিত্রিকার বাবা অর্জুন বাগচির বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার বহু জায়গায় বাস্তব জীবনে মেয়েদের পিছন সারিতে ফেলে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় কিছু সংখ্যক মানুষজনদের মধ্যে। কন্যাসন্তানদের প্রতি তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা ও অসামাজিক মনোভাবকে মুছে দিতেই নিজের কন্যা সন্তানকে মাতৃরূপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে নারীদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে এলাকার বিশিষ্ট পুরোহিত তারক আচার্য বলেন, ”মেয়েরা মায়ের সমান। মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করাটা বিধিসম্মত।” দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কুমারী পূজার (Kumari Puja) প্রচলন থাকলেও কোনও শিশু কন্যাকে লক্ষ্মী রূপে আরাধনা করার ঘটনা এখনও পর্যন্ত নজিরবিহীন। বাগচী দম্পতির এই কর্মকাণ্ডকে স্বচক্ষে দেখতে নাঘাটার বাগচী বাড়িতে এইদিন ভিড় জমান আশেপাশের প্রতিবেশীরা।
দেখুন ভিডিও: