সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্ণব আইচ: দীপাবলির সন্ধে থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। তাঁদের হাতে ছিল শব্দদূষণ বা ডেসিবেল মাপার যন্ত্র। মাইকে চলছিল লাগাতার প্রচার। রাস্তায় টানা টহল চলছিল পুলিশবাহিনীর গাড়ি আর বাইকের। কোনও এলাকা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ শোনা গেলে অথবা অভিযোগ এলেই আধিকারিকরা ছুটে যাচ্ছিলেন সেখানে। তার উপর সন্ধে থেকেই সিসিটিভির মনিটরের উপর চোখ পুলিশ আধিকারিকদের। রাস্তাগুলির উপর কড়া নজরদারি। কাউকে শব্দবাজি ফাটাতে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে ফেলা। এইভাবেই কালীপুজোর রাতে কলকাতা ও তার আশপাশের জেলা এবং কমিশনারেটগুলিতে শব্দদানবকে জব্দ করতে সফল হল পুলিশ।
কলকাতায় শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্রত্যেক থানার ওসি ও পুলিশকর্তাদের কড়া নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ মেনেই এদিন সন্ধের আগেই রাস্তায় নেমে পড়েছিল বাহিনী। রাস্তায় ছিলেন পুলিশকর্তারাও। কালীপুজোর নিরাপত্তায় ছিল অতিরিক্ত পাঁচ হাজার পুলিশ। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ, সন্ধে আটটার আগে বা রাত দশটার পর যেন আতসবাজি পোড়ানো না হয়। একসঙ্গে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ রোখাই কলকাতা পুলিশের কাছে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তাতেই সফল কলকাতা পুলিশের বাহিনী। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বায়ুর দূষণ গতবারের থেকে অনেক কম ছিল। গতবার যেখানে দূষণের সূচক ২৫০ ছিল, এবার সেখানে সূচক ১০০ থেকে ১৫০ মধ্যে ছিল। রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের হাতে ৭৫২ জন ধরা পড়েছে। আবাসনগুলির উপরও কড়া নজর ছিল পুলিশের। কোনও আবাসন থেকে শব্দবাজির আওয়াজ শুনতে পাওয়ামাত্রই ছুটে গিয়েছে পুলিশ। আবার আবাসনে শব্দবাজি রুখতে বেশ কয়েকটি বহুতলের ছাদকেই ওয়াচ টাওয়ার বানায় পুলিশ।
কয়েকটি ছাদ থেকে বাইনোকুলার নিয়ে আশপাশের বহুতলগুলির উপর নজরদারি চালানো হয়। মোট ওয়াচ টাওয়ারের সংখ্যা ছিল ২৭টি। কলকাতার পুলিশ আবাসনগুলিতেও যাতে শব্দবাজি না ফাটানো হয়, এবার সেদিকেও কড়া লালবাজার। রাতে পুলিশ আবাসনগুলিতে হঠাৎই হানা দিয়ে পুলিশ দেখেছে, কোথাও শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে কি না। শহরের হাসপাতালগুলির আশপাশে যাতে কেউ শব্দবাজি না ফাটায়, তার জন্য বিশেষ তৎপরতা ছিল পুলিশের। শহরের কয়েকটি অঞ্চল থেকে বিক্ষিপ্ত শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ আসে। একদিকে, দক্ষিণ শহরতলি, বেহালার বিস্তীর্ণ অঞ্চল, আবার অন্যদিকে, মধ্য কলকাতার বড়বাজার, পোস্তা, জোড়াসাঁকো, গিরিশ পার্ক, উত্তর কলকাতার বড়তলা, জোড়াবাগান অঞ্চলে ছিল পুলিশের বিশেষ টহল। শহরের অপরিসর রাস্তাগুলিতে টহলের জন্য ১১৪টি অটো এবং ১৮টি টাটা সুমো ভাড়া করে পুলিশ। ভিতরে একজন করে পুলিশ অফিসার ও তিনজন পুলিশকর্মী। কোথাও শব্দবাজির আওয়াজ পেলেই তা লক্ষ্য করে ছোটেন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় টহল দেয় ২১টি কুইক রেসপন্স টিম, ১৮টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, রাত দশটার পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সময়টুকু ছিল পুলিশ বাহিনীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে শব্দবাজি ফাটানো ও আতসবাজি পোড়ানোর দিকে নজর রাখতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। আইন যাতে কেউ না ভাঙতে পারে, তার জন্য বেশি রাতে কোনও ছাদে আতসবাজি পোড়াতে দেখলেই সেই বাড়ি ও বহুতলে গিয়ে পুলিশ হাজির হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রা শুরু ৭ নভেম্বর, উদ্বোধনে আমন্ত্রিত প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী]
The post শব্দকে জব্দ, দীপাবলির রাতে দূষণ রোধে সফল পুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.