দুলাল দে: সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে সোমবার আলোচনায় বসতে পারেন হাবাস আর ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। এরপর বসবেন না তো কবে বসবেন? এরকমভাবে তিন তিনবার ইস্টবেঙ্গলকে ‘তিন’ গোলে হারানোর পর অন্য কোচ হলে এতক্ষনে লাফালাফি শুরু করে দিতেন। কিন্তু তিনি আন্তেনিও লোপেজ হাবাস। যাঁর যাবতীয় বিক্রম মাঠের ভিতরে। আর মাঠের বাইরে একগাল হাসিমুখের অত্যন্ত ভদ্র একজন ব্যক্তিত্ব।
ম্যাচ শুরুর আগে এদিন দুপুরেই কথা হচ্ছিল ব্যারেটোর সঙ্গে। যিনি আইএসএলের প্রথম বছরেই হাবাসের সহকারী ছিলেন। বলছিলেন, ”ড্রেসিংরুমে প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারী হাবাস (Antonio Lopez Habas)। কথার মধ্যে অদ্ভুত একটা আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কিছু বললে ফুটবলাররা হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করেন।”
হাবাস প্রবল আক্রমণাত্মক কোচ না রক্ষনাত্মক? একটা সময় পর্যন্ত ফুটবল বিশেষজ্ঞরা হাবাসকে প্রবল রক্ষণাত্মক কোচের তকমা শরীরে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবাদ করে হাবাস সব সময় বলতেন, ”আমি রক্ষণাত্মক কোচ নই। বরং বলতে পারেন, ব্যালান্স কোচ। মানে প্রয়োজন বুঝে আক্রমণে যাই। প্রয়োজন বুঝে রক্ষণে। যখন যেমন প্রয়োজন।”
[আরও পড়ুন: ফের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় তারকা ব্যাডমিন্টন জুটি সাত্বিক-চিরাগ]
কিন্তু এই পর্বে হাবাসের গেম প্ল্যান দেখে কে বলবেন, তিনি রক্ষণাত্মক? বরং কখনও কখনও প্রবল আক্রমণাত্মক। ম্যাচ শেষে তার উত্তরও দিয়ে গেলেন হাবাস। ”হাতে আক্রমণের ফুটবলার পেলে আমিও যে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পারি, সেটা নিশ্চয়ই এখন সবাই বুঝেছেন। যে সময়ের কথা সবাই বলেন, সেই সময় আমার হাতে আক্রমণভাগ কীরকম ছিল, ভালভাবে দেখুন।”
এই ভদ্রলোকই মাঠের ভিতর উত্তেজিত হয়ে এদিন হলুদ কার্ড দেখলেন। আর মাঠের বাইরে এসে রীতিমতো শান্ত। দেখে কে বলবে, একটু আগেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিতে এসেছেন ৩-১ গোলে ! প্রথমার্ধে ৩ গোল। সমর্থকরা গ্যালারি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ৭৫ এর পাঁচ গোলের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তখন তাড়া করতে শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু প্রথমার্ধে আক্রমণের ঝড় তোলা মোহনবাগান কেন দ্বিতীয়ার্ধে এভাবে দাঁড়িয়ে পড়বে? হাবাস নিজেও তো বুঝতে পারছেন না।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বললেন, ”কেন যে এভাবে দলটা দ্বিতীয়ার্ধে দাঁড়িয়ে পড়ল সত্যিই বুঝতে পারলাম না। অথচ বিরতির সময় আমি কিন্তু ফুটবলারদের পই পই করে বুঝিয়েছিলাম, আক্রমণ ছাড়লে চলবে না। হয়তো প্রথমার্ধে তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ মানসিকভাবে সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিল।”
কিন্তু প্রথমেই পেনাল্টি থেকে ক্লেটন যদি গোলটা করে দিতেন? হয়তো ক্লেটনের পেনাল্টি মিসটাই এদিনের ডার্বির টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। হাবাস কিছুটা মানলেন। কিছুটা মানলেন না। বলছিলেন, ”পেনাল্টি থেকে গোলটা হলে আমাদের সমস্যা হতেও পারতো। আবার সমস্যা না-ও হতে পারত। কোনও কিছুই এভাবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। হয়তো শুরুতে পিছিয়ে পড়লে আমার ছেলেরা আরও দ্বিগুনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ত। কিন্তু বিশালের কৃতিত্বটা ভাবুন। আমাদের গোলকিপার অসাধারণ। দারুণ সেভ করেছে। শুধু ক্লেটনের মিস নয়। বিশালের সেভটাও বলুন।”
আপাতত কলকাতা ডার্বিতে হাবাসের যা পারফরম্যান্স, তাতে বলাই যায়, হাবাস আর কলকাতা ডার্বি সমার্থক শব্দ। এই একটা জায়গায় এসে হাবাস সম্মতি জানিয়ে হেসে বললেন, ”বলতেই পারেন। তবে কালকের থেকে আমার কাছে আর ডার্বির অস্তিত্ব থাকবে না। শুধুই কেরালাকে নিয়ে ভাবব। একদিন পরেই চলে যেতে হবে। এত কম সময়ের মধ্যে দলকে রেডি করা সত্যিই সমস্যার।”