স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের হাত ধরে বাংলার শুটিং স্পট থেকে শুরু করে স্টুডিও, বাংলার কৃষ্টিকে তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে। নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসব সংক্রান্ত এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানালেন রাজ্যের যুবকল্যাণ এবং ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এবছর উৎসবের কো-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, “বাংলায় প্রচুর শুটিং স্পট, আন্তর্জাতিক মানের স্টুডিও, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এবং শুটিংয়ের পরিকাঠামো রয়েছে। উৎসবের প্রাক্কালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে।”
বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের পর্যটন বিভাগের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “বাংলাকে বিশ্ব বাংলায় পরিণত করার মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চলতি বছর থেকে প্রক্রিয়া চালু হবে। তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগ এবং পর্যটন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে চলবে এই কর্মসূচি। “চলতি বছর বিশ্বের ২০টি দেশের পরিচালক-প্রযোজক, কলাকুশলীরা এই উৎসবে যোগদান করবেন। উৎসবের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন স্থান তাঁদের সামনে তুলে ধরা হবে।” রবিবারের বৈঠকে একথা তুলে ধরেন, রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের প্রধান সচিব বিবেক কুমার। কলকাতায় নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার ব্রুশ বাকনেল বলেন, “দুর্গাপুজার কার্নিভাল, সল্টলেকে আন্ডার সেভেনটিন বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাকে তুলে ধরেছে রাজ্য সরকার। চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে দিয়ে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। ‘হ্যাটট্রিক করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।” এদিন বৈঠকে ছিলেন উৎসবের চেয়ারপার্সন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এবং নন্দনের অধিকর্তা যাদব মণ্ডল।
[নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে টুইটার ‘ডিপি’ কালো করার ডাক মুখ্যমন্ত্রীর]
এবছর চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চ আলো করবেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, কমল হাসন, কাজল, মহেশ ভট্ট, কুমার শানু। থাকবেন ব্রিটেশ পরিচালক মাইকেল উইন্টারবটম-সহ বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা পরিচালক ও শিল্পীরা। উৎসবের দিনগুলিতে পরতে পরতে অপেক্ষা করে রয়েছে আরও বিস্ময়! এ বছর থেকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে লুপ্তপ্রায় ৮টি আঞ্চলিক ভাষার ছবি। ‘রেয়ার ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্ডিয়ান ফিল্ম’ বিভাগে দেখানো হবে মংপা, কোঙ্কনি, কোদাভা, বোরো, ডগরি, মৈথিলী, খাসি ও চাকমা ভাষায় তৈরি ছবি। “এই ভাষাগুলোয় ছবি তৈরি হলেও সেগুলি প্রদর্শনের কোনও মঞ্চ পায় না। সেকারণে এ বছরের চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিগুলোকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।” – মন্তব্য বিবেক কুমারের।
রয়েছে আরও চমক। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে দেখা যাবে সিনেমা ইতিহাসের কয়েকটি বিশ্ববিখ্যাত মুভি ক্যামেরা। থাকছে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অন্যতম স্রষ্টা ল্যুমিয়ের ব্রাদার্সের ক্যামেরা। উৎসব চলাকালীন ১১—১৭ নভেম্বর গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ‘ল্যুমিয়ের’, ‘অ্যারিফ্লেক্স’, ‘অ্যালেক্সা’ এবং পথের পাঁচালির স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের ‘মিচেল’ ক্যামেরা চাক্ষুষ করার সুযোগ পাবেন চলচ্চিত্রপ্রেমী ও শিক্ষার্থীরা। উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি ‘ইংল্যান্ড’৷ এ বছর ৫৩টি দেশের ১৪৩টি ছবি প্রদর্শিত হবে। তার মধ্যে ৯৩টি বিদেশি ভাষার এবং ৫০টি ভারতীয় ভাষার ছবি। চলতি বছর থেকে উইমেন ডিরেক্টরস্ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে ‘ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজেস’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
[এবার অনলাইনেই বিয়ের রেজিস্ট্রি, রাজ্যের সিদ্ধান্তে খুশি নয়া প্রজন্ম]
এই প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকে ৫১ লক্ষ টাকা ও শ্রেষ্ঠ নির্দেশককে ২১ লক্ষ টাকা এবং রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি দেওয়া হবে। এতদিন শুধু বিদেশি ছবিই প্রতিযোগিতামূলক ছিল। এবছর থেকে ভারতীয় ছবিকে প্রতিযোগিতার আওতায় আনা হয়েছে। সেরা ভারতীয় ছবিকে ‘হীরালাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। এই বিভাগের শ্রেষ্ঠ নির্দেশক পাবেন পাঁচ লক্ষ টাকা এবং শ্রেষ্ঠ ছবিকে দেওয়া হবে সাত লক্ষ টাকা। উৎসবে প্রদর্শিত ৮৭টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি এবং ৫১টি তথ্যচিত্রও প্রতিযোগিতামূলক। ‘সত্যজিৎ রায় স্মারক’ বক্তৃতা দেবেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক রাচেল ড্রয়ার৷ এবছরের উদ্বোধনী ছবি ইরানের ‘ইয়েলো’৷ হোমেজ বিভাগে সম্মান জানানো হবে প্রয়াত রামানন্দ সেনগুপ্ত, ওম পুরী, টম অলটার। প্রত্যেকের একটি করে ছবি প্রদর্শিত হবে। তিনটি বাংলা ছবির প্রিমিয়ার হবে এই উৎসবে। উৎসব চলাকালীন মোট ১২টি হলে চলবে সিনেমাগুলি। চলচ্চিত্র উৎসবকে আমজনতার কাছে পৌঁছে দিতে পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কসবা, টালাপার্ক, বেহালা, টালিগঞ্জ, যাদবপুরে ছবি দেখানো হবে।
The post বাংলার সংস্কৃতিকে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব appeared first on Sangbad Pratidin.