অভিরূপ দাস: ট্রেন থেকে পরে মাথায় গুরুতর চোট। যন্ত্রনায় ছটফট করছে শরীর। জখম সেই রোগীই সাড়ে ছ’ঘণ্টা ধরে পরে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের ট্রলিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফ জবাব, বেড নেই অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
উলুবেড়িয়া থানা এলাকার বহিরা গ্রামে বাড়ি দিলীপ কুমার দাসের। ষাটোর্ধ্ব দিলীপবাবু এদিন ট্রেনে হাওড়ায় আসছিলেন। সেসময় ভারসাম্য হারিয়ে ফুলেশ্বর স্টেশনে ট্রেন থেকে পড়ে যান। ট্রেনের খোয়ায় গুরুতর আঘাত লাগে মাথায়।
শুক্রবার দুপুরে আরপিএফ তাঁকে উদ্ধার করে। দ্রুত বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি তাঁকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে রোগীর পরিবারকে জানানো হয়, আঘাত অত্যন্ত গুরুতর। সেখান থেকেই এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয় রোগীকে। স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্ব নিয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, জেলা থেকে শহরে অকারণ রোগী ‘রেফার’ করা বা পাঠানো চলবে না। যদি একান্তই পাঠাতে হয়, তার উপযুক্ত কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে।
[আরও পড়ুন: ২৫ মার্চের আগে রাজ্যে আরও ২১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী! বাড়ছে হেভিওয়েটদের নিরাপত্তা]
কিন্তু একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট, জেলা হাসপাতালের রেফার রোগ এখনও সাড়েনি। শুক্রবার দুপুরে উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে আসে দিলীপবাবুর পরিবার। এসএসকেএমে প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানানো হয় মাথার ভেতরে রক্তজমাট বেঁধেছে। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে হবে না! রোগীর পরিবারকে বলা হয়, ট্রমা কেয়ার ইউনিটে বেড নেই নীলরতন সরকার (NRS) মেডিক্যাল কলেজে চলে যান। গুরুতর চোটপ্রাপ্ত ওই রোগীকে নিয়ে নীলরতনে যাবেন কীভাবে তা ভাবতে গিয়েই অথৈ জলে রোগীর পরিবার। রোগীর আত্মীয় দেবাশিস সাঁতরা, জানিয়েছেন, ওনার মাথার চোট গুরুতর। এমন অবস্থায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বেড পাব সে নিশ্চয়তা কোথায়? যেতে যেতেই হয়তো রোগী মারা গেল। তার দায় কে নেবে?
বাধ্য হয়েই এসএসকেএমের সুপার পীযুষ রায়কে অনুরোধ করেন রোগীর পরিবার। দেবাশিসবাবুর কথায়, “সুপারকে আমরা বলেছি দয়া করে একটা বেডের বন্দোবস্ত করুন। রোগী নয়তো বাঁচবে না।” শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রলিতেই পড়ে আছেন দিলীপবাবু। এখনও মেলেনি বেড। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, আমরা বন্ডে সই করেছি। মারা গেলে এখানেই যাবে। প্রশ্ন উঠছে জেলায় জেলায় একাধিক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হলেও কেন শেষ ভরসা সেই কলকাতার হাসপাতালগুলিই? মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একাধিকবার জানিয়েছেন, “জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। তবু রেফার করে দিচ্ছে তারা।” রোগীর পরিবারের অভিযোগ, জেলা হাসপাতালের ডাক্তারেরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করে শহরে রোগী পাঠিয়ে দিচ্ছেন।