স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতার সমস্ত বস্তির ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটিয়ারাও এবার শহরের খরিদ জমির নিয়মেই পুরসভার প্ল্যান অনুমোদন করেই বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এতদিন ঠিকা জমিতে দোতলা বাড়ি করা যেত, এবার জমির পরিমাণ হিসাবে বহুতলও নির্মাণ করতে পারবেন প্রজা-ভাড়াটিয়ারা।
পুরসভার (KMC) নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়ি করার জন্য ঠিকা প্রজাদের আর আলিপুরের কন্ট্রোলার অফিসে ছুটতে হবে না। বাড়ির ফর্ম পূরণ থেকে প্ল্যান অনুমোদন সবই হবে পুরভবনে। এমনকী, প্রয়োজনীয় মন্ত্রিসভার সম্মতিও জোগাড় করে দেবে পুরসভা। মেয়র পারিষদ বৈঠক শেষে শুক্রবার মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Mayor Firhad Hakim) জানিয়েছেন, “ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটিয়াদের হয়রানি বন্ধ করতে সমস্ত আবেদন এখন পুরভবনের কাউন্টারে নেওয়া হবে। দায়িত্বে থাকছেন বিশেষ কমিশনার। অবশ্য সমস্ত ঠিকা প্রজাকে কিন্তু ভাড়াটিয়াদের প্রাপ্য অধিকার দিতেই হবে, তবেই প্ল্যান অনুমোদন করবে পুরসভা।”
এতদিন ঠিকা জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য ব্যাংকের ঋণ পাওয়া যেত না। এদিন মেয়র বলেন, “বাড়ি নির্মাণে পুরসভার অনুমোদনে ব্যাংক ঋণও পাবেন ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটিয়ারা। ব্যাংক ঋণ নিয়েই পছন্দমতো বাড়ি বানাতে পারবেন বস্তিবাসীরা।” কলকাতা ও হাওড়ার তথাকথিত জমিদাররা একসময় তাঁদের অধিকৃত জমিতে ভাড়টিয়া হিসাবে কিছু মানুষকে বসবাসের অধিকার দেন। কলকাতায় এমন জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার একর এবং হাওড়ায় ৫১৭ একর।
[আরও পড়ুন: বেলেঘাটায় মহিলা আইনজীবীর মা-বাবা, ভাইকে বেঁধে মারধর, টাকা-গয়না নিয়ে চম্পট ডাকাতদের]
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইন করেই সব ভাড়াটিয়াকে ঠিকা প্রজা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাঁদের ভাড়াটে বসানোরও সুযোগ করে দেওয়া হয়। বাম আমলে আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ ৯.৫ মিটার পাকাবাড়ি নির্মাণের অধিকার দেওয়া হয়। তাই বহু ঠিকা প্রজা বা ভাড়াটিয়ার আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও বড় বাড়ি তৈরি করতে পারেননি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই থাকতে হয়েছে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নয়া ঠিকা আইন পাস হতেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম সেই সমস্যার সমাধান করে দিলেন।
বিষয়টি নিয়ে ময়দানে পুরসভার টেন্টে পারিষদদের বৈঠক শেষে ঠিকা কন্ট্রোলারকে নিয়ে আলোচনা করেন মেয়র। পরে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারকে পাশে নিয়ে ফিরহাদ জানান, “পুরভবনের কাউন্টারে বাড়ির প্ল্যানের অনুমোদনের সঙ্গে মিউটেশনও করে দেবে পুরসভা। সেক্ষেত্রে মিউটেশন দীর্ঘমেয়াদি লিজ হিসেবে দেওয়া হবে। ভাড়াটিয়ারাও বাড়ির মালিকানা পেয়ে যাবেন। তবে বাড়ি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা গেলেও বিক্রি করা যাবে না।”
সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটিয়াদের নানা পরিষেবার কথা ঘোষণা করে শাসকদল তৃণমূল (TMC)। বস্তির যে সমস্ত বাসিন্দাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই, তাঁদের জন্যও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে পুরসভার। সেই বাড়ি যদি বহুতল হয় সেখানে প্রয়োজনে লিফটের ব্যবস্থা করবে পুরসভা।