অভিরূপ দাস: রাক্ষুসে এক টিউমার। বুকের পাঁজরের চার হাড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। সে টিউমার বাদ দিতে গিয়ে বাদ পড়ল পাঁজরের চার হাড়ও! সিমেন্ট আর মেস দিয়ে মথুরাপুরের কাঁকনদিঘির হারাধনের পাঁজর তৈরি করে নজির গড়লেন অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আপাতত বিপন্মুক্ত হলেও শরীরে আঘাত লাগতে পারে, এমন কোনও কাজ করতে পারবেন না হারাধন পুরকাইত। বন্ধ ক্রিকেট-ফুটবল খেলাও।
২০১৮ সালের কথা। দীর্ঘদিন ধরে বুকে ব্যথার চোটে কাবু ছিলেন বছর একুশের হারাধন। গ্রামের এক দালালের পাল্লায় পড়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন সে সময়ে। সেখানেই ধরা পরে অসুখটা। ইউইং সারকোমা(Ewing’s sarcoma), এক বিরল ক্যানসার। ভিনরাজ্যে অসুখ ধরা পড়লেও চিকিৎসা মেলেনি। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে মেলে স্রেফ হয়রানি। আঠারোশো কিলোমিটার পেরিয়ে ফের বেঙ্গালুরু থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
[আরও পড়ুন: Taliban Terror: আফগানিস্তানে কাজে গিয়ে বিপদের মুখে কার্শিয়াংয়ের ২ বাসিন্দা, উদ্বিগ্ন পরিবার]
গ্রামেই অ্যাপোলো হাসপাতালের (Apollo Multispeciality Hospitals) মেডিক্যাল অঙ্কোলজির ডিরেক্টর ডা. পি এন মহাপাত্রর নাম শোনেন তিনি। কলকাতায় এসে দেখা করেন। জটিল এ অস্ত্রোপচারের ভার সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. শুভদীপ চক্রবর্তীর হাতে তুলে দেন ডা. মহাপাত্র। রোগীকে পরখ করার পর অপেক্ষা করেননি ডা. চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “টিউমারটা প্রকাণ্ড আকারের হয়ে উঠেছিল। নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না রোগী। আটটা কেমোথেরাপির পরও বড় একটা সুরাহা হয়নি।” দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে তৈরি হয় মেডিক্যাল টিম। যেখানে ছিলেন ডা. আদীশ বসু, ডা. তাপস কর, ডা. তমাশিস মুখোপাধ্যায়। ন’ঘণ্টার ম্যারাথন অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. তন্ময় দাস, ডা. কৌস্তুভ চক্রবর্তী। গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে অস্ত্রোপচার হয়। মাংসপিণ্ড বাদ দিতে গিয়ে এতটাই গভীর গর্ত করতে হয় যে, হৃৎপিণ্ডের উপর আর কোনও আস্তরণ ছিল না। বাদ পড়ে পাঁজরের চারটি হাড়। হাড় বানাতে নিয়ে আসা হয় বোন সিমেন্ট।
ডা. শুভদীপ চক্রবর্তী জানান, বোন সিমেন্ট এক ধরনের সিমেন্ট, যা চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। প্রোলিন মেস আর বোন সিমেন্ট মিশিয়ে ওই রোগীর পাঁজর তৈরি করা হয়। পিঠের পিছন দিক থেকে মাংস নিয়ে এসে তৈরি করা হয় বুকের পেশি। গত ৫ আগস্ট হারাধনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সারা পৃথিবীতে ফি বছর একশোজন ক্যানসার আক্রান্ত হলে তার মধ্যে ১ জন এই ইউইং সারকোমায় আক্রান্ত হন। আদতে যা একধরনের টিউমার। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৭৫ জনকেই বাঁচানো যায় মারণ ক্যানসার থেকে।