কৃষ্ণকুমার দাস: সংক্রমণ রুখতে সরকারি করোনা (Corona Virus) বিধি মানছে না কলকাতা পুরসভার (KMC) নিয়ন্ত্রণে থাকা অধিকাংশ সুলভ শৌচালয়। একদিকে ব্যবহারকারীরা যেমন মাস্ক না পরে শৌচালয়ে ঢুকছেন, অন্যদিকে যাঁরা কাউন্টারে বসে টাকা নিচ্ছেন সেই কর্মীরাও নাক-মুখ খোলা রেখেই বসছেন বলে অভিযোগ। অনেকে আবার বাইরে নাক-মুখ ঢাকা থাকলেও শৌচালয়ে ঢুকেই ‘হাওয়া লাগাতে’ মাস্ক খুলে ফেলছেন বলে স্বীকার করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় শহরের অন্যতম ‘পাবলিক প্লেস’ এই সুলভ শৌচালয় থেকে নতুন করে করোনা (COVID-19) সংক্রমণের আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছেন পুরকর্তারাও।
পুরসভার বিভাগীয় প্রশাসক ও প্রাক্তন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, “সুলভ শৌচালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সংস্থাকে স্যানিটাইজার রাখা এবং কর্মীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঠিকভাবে মাস্ক মুখে না থাকলে শৌচালয়েই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি রয়েছে।” ট্রেন, বাস যেমন পুরদমে চলছে তেমনই অফিস এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আর্থিক কারণেই সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই পাশ্ববর্তী জেলা ছাড়াও ভিন্ন রাজ্য থেকেও প্রতিদিন কলকাতায় আসা হাজার হাজার মানুষ সুলভ শৌচালয় নির্ভর হয়ে পড়ছেন। বৃহস্পতিবার উত্তরের গিরিশ পার্ক, শ্যামবাজার মানিকতলা ও দক্ষিণের হাজরা, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ ঘুরে নজরে পড়ল করোনা বিধি ভাঙার অজস্র ছবি। কোথাও কর্মীদের মুখে মাস্ক নেই তো আবার দ্রুত ঢুকে পড়া ব্যবহারকারিদের নাক-মুখ সম্পূর্ণ খোলা। তবে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা দেখে অনেক শৌচালয়ের কর্মীরা তাড়াতাড়ি মাস্ক পরে নিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: গৃহকর্ত্রীর ঘাট কাজ সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে আত্মীয়রা, অসম্পূর্ণ রইল শ্রাদ্ধ]
পুরসভার সতর্কবার্তা মেনে অধিকাংশ টয়লেটে স্যানিটাইজার রাখা আছে। যাঁরা ব্যবহার করতে ঢুকছেন, সেই অফিসযাত্রী বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেরই পকেটে স্যানিটাইজার থাকছে। শহরে এখন ৩৭০টি সুলভ শৌচালয়েই আগের তুলনায় কম সংখ্যায় মানুষ প্রাকৃতিক ক্রিয়া-কর্মে ঢুকছেন বলে স্বীকার করেছেন পুরসভার প্রশাসক। স্বপনবাবুর কথায়, “শহরজুড়ে কোনও সমীক্ষা করা না হলেও কর্মীদের রিপোর্ট পেয়ে বলছি, করোনা সংক্রমণের ভয়ে পাবলিক টয়লেটে লোক এখনও কম যাচ্ছেন।”
দ্বিতীয় প্রজাতির ‘ভয়ংকর’ করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা নতুন করে কলকাতাবাসীর মনে ভীতির ঢেউ তুলছে। যেহেতু জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে আসা মধ্যবিত্তরাই এই শৌচালয়গুলি ব্যবহার করেন তাই একবার সংক্রমণ শুরু হলে তা গোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অসাবধানতা ও শিথিলতা সংক্রমণের নতুন দরজা খুলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। যদিও এরই মধ্যে ধর্মতলা, বড়বাজার, হাতিবাগান, হাজরা, মৌলালি, আলিপুর, ভবানীপুর, শিয়ালদহের মত জনপদে আরও নতুন কিছু সুলভ শৌচালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, এই এলাকাগুলিতে আরও প্রচুর সংখ্যায় ‘পাবলিক টয়লেট’-এর চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার বিভাগীয় প্রশাসক।