অর্ণব আইচ: জামতাড়া, ভরতপুরের পর এবার সাইবার জালিয়াতির নতুন ‘হাব’ মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর ও উজ্জয়িনী! এই দুই জায়গার কয়েকটি গ্রাম থেকেই সারা দেশের বাসিন্দাদের কাছে যাচ্ছে ফোন। সাইবার জালিয়াতি করে তারা তুলে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে। মধ্যপ্রদেশের গ্রামগুলোতে বসে প্রতারণা করা হলেও এই চক্রের মাথারা চিন ও পাকিস্তানে রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর।
জানা গিয়েছে, এবার ওই গ্রামগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। বড় কোনও সাইবার অপরাধ ঘটানোর আগেই যাতে তাদের নির্মূল করা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন তাঁরা। লালবাজার সূত্রে খবর, 'অল্প টাকা লগ্নি করলেই ফেরত পাওয়া যাবে মোটা টাকা।' নামী লগ্নিকারী সংস্থার নাম করেই ফোন করছে সাইবার জালিয়াতরা। সেই সংস্থার নাম শুনেই সেই ‘কলার’কে বিশ্বাস করে ফেলছেন সকলে। আর জালিয়াতরা এই সুযোগই নিচ্ছে।
এমনই একটি জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে মূলত হিন্দি ও ভাঙা ইংরেজিতেই জালিয়াতরা ফোন করেছিল। এক ব্যক্তিকে বলা হয়েছিল একটি লটারিতে তাঁর মোবাইল নম্বর বিশেষ স্কিমের আওতায় এসেছে। ওই স্কিমেই তিনি টাকা লগ্নি করলে প্রায় তিনশো শতাংশ পর্যন্ত টাকা ফেরৎ পাবেন। প্রায় তিনগুণ টাকা ফেরৎ পাওয়ার লোভে তিনি টাকা লগ্নি করতে রাজি হয়ে যান। অনলাইনেই তাঁকে লগ্নি করতে বলা হয়েছিল। প্রথমে কিছু টাকা লগ্নি করলে তাঁকে অল্প টাকা সুদ হিসাবে ফেরৎ দেওয়া হয়। এভাবে বিশ্বাস অর্জন করে ওই সাইবার জালিয়াতরা। এর পরই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে পুরো টাকাই হস্তগত করে নেয় তারা। এই একইভাবে বহু ব্যক্তির সঙ্গে জালিয়াতি করা হয়েছে। ফাঁদে পা দিয়ে এভাবেই কয়েক লাখ খুইয়েছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: ‘দেশ চায় আমি সক্রিয় রাজনীতি করি,’ অবস্থানে অনড় রবার্ট বঢরা, রক্তচাপ বাড়ছে কংগ্রেসের?]
ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত নেমে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া বা রাজস্থানের ভরতপুরের পর এবার সাইবার জালিয়াতদের নতুন ‘হাব’ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী ও ইন্দোরে। এখানে গ্রামের অনেক বাসিন্দা ‘কলার’হিসাবে দেশের বিভিন্ন শহর ও রাজ্যের বাসিন্দাদের ফোন করে জালিয়াতির চেষ্টা করে। আবার তাদের পরিচিত লোকেরাই অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে জালিয়াতির টাকা ভুয়ো বা ‘মিউল অ্যাকাউন্টে’টাকা পাঠায়।
এছাড়াও পুলিশের চোখ এড়াতে এই ‘সাইবার জালিয়াতি হাব’-এর সদস্যরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। তারা নজরদারি চালায় যে একসঙ্গে গাড়ি করে বা পায়ে হেঁটে কেউ আসছে কি না। কোনও তল্লাশি শুরু করার আগেই গ্রামের মহিলা ও বয়স্করা এসে পুলিশের গাড়ি ঘিরে নেয়। অভিযুক্ত সাইবার জালিয়াতদের ধরার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের। সম্প্রতি হরিয়ানায় গিয়েও এরকম বাধার মুখে পড়েন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, মধ্যপ্রদেশে চক্র চললেও সাইবার জালিয়াতদের মাথারা রয়েছে চিন ও পাকিস্তানে। বিদেশ থেকেই তারা মধ্যপ্রদেশের জালিয়াতদের সাহায্যে এই চক্র পরিচালনা করে। এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।