অর্ণব আইচ: মৃত ব্যক্তির এটিএম কার্ড চুরি করে লকডাউনের মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি থাকার ফলে তাদের শনাক্ত করাও খুব সহজ ছিল না। লালবাজারের গোয়েন্দা তদন্ত করে জানতে পারেন, এর পিছনে রয়েছে বাড়ির পরিচারিকার হাত। ওই পরিচারিকা ও তার দুই জামাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা তারা গত তিন মাসে খরচ করে ফেলেছে বলে দাবি অভিযুক্তদের।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বহুতলের বাসিন্দা অনুরাগ আগরওয়াল জানতে পারেন, তাঁর প্রয়াত বাবার সত্যনারায়ণ আগরওয়ালের একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েক দফায় তুলে নেওয়া হয়েছে ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গত ১ জুন তিনি যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ মার্চ থেকে ৩০ মে লকডাউনের মধ্যেই বিভিন্ন এটিএম থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে এই টাকা। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের ওয়াচ শাখা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, নদিয়ার করিমপুর, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট এবং হুগলির গুপ্তিপাড়ার বিভিন্ন এটিএম কাউন্টারে গিয়ে এটিএম কার্ডের সাহায্যে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটিএম কাউন্টারগুলির সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, দুজন এই টাকা তুলেছে। তাদের মুখে রয়েছে মাস্ক, মাথায় টুপি। তবুও তাদের চেহারার সাহায্যে গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেন।
[আরও পড়ুন: ১০ হাজারের প্যাকেজে নর্তকী-যৌনকর্মীদের বাংলাদেশে পাচার! চক্রের ‘কিংপিন’ ট্যাক্সিচালক]
এলাকার সূত্র ধরেই নদিয়ার করিমপুর থেকে রঞ্জিত মল্লিক ও হুগলির গুপ্তিপাড়া থেকে সৌমিত্র সরকার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, তাদের শাশুড়ির নাম রীতা রায়। রীতা সত্যনারায়ণ আগরওয়াল বেঁচে থাকার সময় তাঁর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত। সে তাদের এটিএম কার্ডটি দিয়েছে। রীতাকে নদিয়া থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশকে রীতা জানায়, ওই এটিএম কার্ড দিয়ে সত্যনারায়ণ আগরওয়াল টাকা তুলতেন। তাঁর পিন নম্বর মনে থাকত না। সেই কারণে ছেলে পিন নম্বরটি মেসেজ করে বাবাকে পাঠিয়ে দেন। মোবাইলে সেই মেসেজটি দেখে রীতা। মুখস্থ করে রাখে পিন নম্বর।
সত্যনারায়ণ আগরওয়ালের মৃত্যুর পর এটিএম কার্ড চুরি করে সে বাড়িতে চলে আসে। সেটি তুলে দেয় তার দুই জামাইয়ের হাতে। তারাই টাকা তুলতে শুরু করে। রঞ্জিতের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১৬ লাখ টাকা, সৌমিত্রর বাড়ি থেকে দু লাখ টাকা ও এটিএম কার্ড এবং রীতার বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকা গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে তাঁদের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তাদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ভুয়ো অক্সিমিটার অ্যাপ ব্যবহারে উধাও হতে পারে টাকা! রাজ্যবাসীকে সতর্ক করল CID]
The post মৃতের এটিএম কার্ড হাতিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা উধাও! মাস্ক-টুপি পরেও পার পেল না জালিয়াতরা appeared first on Sangbad Pratidin.