অর্ণব আইচ: জামাইকে বড্ড আপন ভাবতেন শাশুড়ি। আর জামাই মনে করতেন, শাশুড়ির সম্পত্তি যে তাঁরই। আসলে বাদশাহি ঠাটবাট বজায় রাখার জন্য যে ধনী শাশুড়ির সোনা, হিরে আর রত্নখচিত বহুমূল্যের গয়না ও কয়েক লাখ টাকা জামাই হাতিয়ে নিয়েছেন, তা বুঝতে পারেননি প্রৌঢ়া। শেষ পর্যন্ত হাটে হাঁড়ি ভাঙে জামাইয়ের কর্মচারীই। ধনী ব্যবসায়ী শাশুড়ির বাড়ি থেকে দেড় কোটি টাকার গয়না ও সাড়ে চার লাখ টাকা নগদ হাতানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন জামাই রাঘব শরাফ ও তাঁর কর্মচারী শেখ শামিম। অভিযুক্ত জামাই রাঘব নিজেই কলকাতার এক নামী মিষ্টি প্রস্তুতকারক চেন সংস্থার মালিকের ছেলে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় দোকান রয়েছে ওই মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থাটির। ওই পরিবারের ছেলের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দেয় হেস্টিংসের ব্যবসায়ী পরিবারটি। আর বাড়ির জামাই হওয়ার সুবাদে হেস্টিংসে শ্বশুরবাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল রাঘব শরাফের। যদিও ধনী পরিবারের ওই ছেলে তথা জামাতাটির সঙ্গদোষ ও বিলাসবহুল জীবনযাপনেই খরচ হত বহু টাকা। বেশ কিছু ঋণও হয়ে গিয়েছিল। তার উপর বন্ধুদের সামনে বজায় রাখতেই হবে বাদশাহি ঠাঁটবাট।
[আরও পড়ুন: এক দেশ, এক আইন! ইতিহাস গড়ে উত্তরাখণ্ডে পাশ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল]
তাই শ্বশুরবাড়ির একেবারের ভিতরের ঘরে একটি সিন্দুকের উপরই নজর পড়েছিল পরিবারের জামাতার। তাই রীতিমতো ছক সাজান ওই জামাই। শ্বশুর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাই শাশুড়ি ও শ্যালককে নিয়ে নিজের কাছেই রাখেন জামাই। আর তার সঙ্গে রাখেন বাড়ির চাবিও। গত কয়েকদিনের মধ্যে রাঘব ও তাঁর কর্মচারী শামিম তালা খুলে বাড়ির ভিতর একাধিকবার যান। সিন্দুক খুলে হিরে, মুক্তো বসানো প্রায় দেড় কোটি টাকার সোনার গয়না ও সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেন দুজন।
সম্প্রতি স্বামীর চিকিৎসার জন্য ওই ব্যবসায়ী মহিলার টাকার প্রয়োজন হয়। তিনি ছেলেকে নিয়ে হেস্টিংসে বাড়িতে এসে সিন্দুক খুলতেই দেখেন গয়না ও টাকা উধাও। হেস্টিংস থানায় প্রৌঢ়া অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শুরুর পর পুলিশের ধারণা হয়, ওই কাজ পরিবারের কোনও পরিচিত ব্যক্তিরই। বাড়ি ও এলাকার ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। কয়েকটি ফুটেজে জামাই ও তাঁর কর্মচারীকে যাতায়াত করতে দেখা যায়। সেই সূত্রে কর্মচারীকে জেরা করতেই সে তার মালিকের নাম বলে। জামাই রাঘব শরাফকে জেরা করতে ভেঙে পড়েন তিনি। দু’জনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। শামিমের হাত ধরে সরানো কিছু গয়না ও টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা ও গয়না উদ্ধারের জন্য তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।