দীপঙ্কর মণ্ডল: বাড়তি বেতন এবং ভাতা দিয়েও একসময় রাজ্যের সব কলেজে অধ্যক্ষ (Principal) নিয়োগ করা যেত না। ফাঁকা থেকে যেত বহু পদ। রাজ্যে সরকার পোষিত ডিগ্রি কলেজ আছে ৫৫০ টি। বছর দশেক আগে অধ্যক্ষ ছিলেন প্রায় একশোজন। বাকি পদগুলিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল তীব্র অনীহা।
তবে দিন বদলেছে কলেজ সার্ভিস কমিশনের (CSC)। সরকারি সংস্থার নথি অনুযায়ী, এই মুহুর্তে মাত্র ৮০ টি কলেজ অধ্যক্ষহীন। কিছুদিনের মধ্যে এই কলেজগুলিও অভিভাবক পেয়ে যাবে। ১০ মে থেকে অধ্যক্ষ পদে আবেদন গ্রহণ করছে কমিশন। চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনের ঢের আগে অধ্যক্ষ হতে আগ্রহ তুঙ্গে। শ’খানেক আবেদনপত্র জমা পড়ে গিয়েছে কমিশনে। যা নজিরবিহীন বলেই জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
হঠাৎ কোন মন্ত্রে অধ্যক্ষ হওয়ার আগ্রহ এত বাড়ল? কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক কর জানিয়েছেন, “আগে ছাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিংসা দেখা দিত। এছাড়াও স্নাতকে ভরতিকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ চাপ সামলাতে হত অধ্যক্ষদের। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভরতি প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ছাত্র নির্বাচন বন্ধ। মূলত এই দুই কারণে অধ্যক্ষ হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় ভুয়ো পরীক্ষার্থী, কলকাতার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার অন্তত ২৬]
গত ছ’বছরে ৩২৬ জন অধ্যক্ষকে নিয়োগ করেছে কমিশন। এখন কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। আগে যা ছিল ৬০। কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরে দুর্গোৎসবের আগে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া (Recruitment) শেষ হবে। রাজ্যে আর কোনও কলেজ অধ্যক্ষহীন থাকবে না। যে কলেজগুলি এখন অধ্যক্ষহীন, সেখানে টিচার ইনচার্জ বা ভাইস প্রিন্সিপালরা অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্যভাগে এবার শুধু কলেজের শিক্ষকরাই নন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও কলেজ অধ্যক্ষ হতে আবেদন করছেন।
স্নাতকোত্তরে ৫৫ শতাংশ নম্বর, পিএইচডি এবং ১৫ বছরের ন্যূনতম অভিজ্ঞতা লাগে অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য। এছাড়াও এবার নতুন শর্ত, অধ্যক্ষ হতে হলে গবেষণায় অন্তত ১০ টি প্রকাশিত পেপার থাকতে হবে। এছাড়াও এবার আবেদনকারীর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা খতিয়ে দেখে কলেজের দায়িত্ব দেবে কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান দীপকবাবু জানিয়েছেন, এবার ৪০ বছর বয়স হলেই আবেদন করা যাচ্ছে। অধ্যক্ষ নিয়োগে সমস্ত শর্ত পূরণের পর ইন্টারভিউ নেবেন উপাচার্যরা।
[আরও পড়ুন: স্ত্রী কলগার্ল! জানার পরই শুরু দাম্পত্য কলহ, অশান্তির মাঝেই উদ্ধার স্বামীর মুণ্ডহীন দেহ]
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি অধ্যক্ষদেরও অবসরের বয়স বেড়েছে। ২০১৭ সালে বাড়ানো হয় ২ বছর। ফের ২০১৯-এ বাড়ে ৩ বছর। এর ফলে গত বছর পর্যন্ত কেউ অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেননি। তবে চলতি বছরে বেশ কয়েকজন অবসর নেবেন। সেই তথ্য জানতে রাজ্যের প্রত্যেক কলেজকে একটি বিশেষ ফর্ম পূরণ করে পাঠাতে বলেছে কমিশন।