shono
Advertisement

মার্চ থেকেই কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ে ATM জালিয়াতরা, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় জালিয়াতদের তিনটি ডেরার সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
Posted: 09:43 AM Jun 12, 2021Updated: 09:43 AM Jun 12, 2021

অর্ণব আইচ: এই রাজ্যে বিশেষ প্রোজেক্ট শুরু হচ্ছে। তাতে টাকা লগ্নি করছে দিল্লির একটি কোম্পানি। সেই কোম্পানির কর্মকর্তা তথা ব্যবসায়ী সেজে গত মার্চ থেকে মে, এই দু’মাস ধৈর্য্য ধরে কলকাতায় অপেক্ষা করেছিল দিল্লির এটিএম (ATM) জালিয়াতরা। ধৃত এটিএম জালিয়াতদের জেরা করে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় এটিএম জালিয়াতদের তিনটি ডেরার সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সন্ধান মিলেছে তাদের আশ্রয়স্থল আরও কয়েকটি হোটেলেরও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিজেপিতে মোহভঙ্গ? ফের তৃণমূলে ফিরতে চান মুকুল ঘনিষ্ঠ মনিরুল-গদাধর]

তখনও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভাল করে আছড়ে পড়েনি কলকাতায়। মার্চ মাসের প্রথম দিকে দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে উপস্থিত হয় দিল্লির এটিএম জালিয়াতির গ্যাংয়ের মাথা মনোজ গুপ্তা, তার ভাই নবীন গুপ্তা, মূল সঙ্গী মহম্মদ ওয়াকিল। ইতিমধ্যেই মনোজ ও নবীনকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা ও ওয়াকিলকে বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেছেন। এর কয়েকদিনের মধ্যে এসে পড়ে তাদের গ্যাংয়ের অন্যরাও। যেহেতু মনোজ গুপ্তা রোমানীয় গ্যাংকে সাহায্য করার জন্য তিন বছর আগে কলকাতায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল, কয়েকজন বাড়ির দালালের সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁর। সেইমতো সঙ্গী মহম্মদ উকিলকে নিয়ে সে দক্ষিণ কলকাতার বাইপাসের কাছে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ভাই নবীন বা অন্য সঙ্গী নাসিমকে থাকতে বলেছিল হোটেলে। কিন্তু চলাফেরার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল গাড়ি। এ ছাড়াও অন্য সঙ্গীদের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও ফ্ল্যাট। এ ছাড়াও জালিয়াতির পর বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জন্য ভাড়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুঁজছিল জালিয়াতরা। সেই কারণেই মহম্মদ ওয়াকিল এক স্বল্পপরিচিতকে জানায়, তারা ব্যবসায়ী। দিল্লির একটি সংস্থার কর্মকর্তা। এই রাজ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে। তাতেই টাকা লগ্নি করছে তারা। সেই কারণে তাদের গাড়ি ও আরও কয়েকটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজন। স্বল্পপরিচিত ওই ব্যক্তি ওয়াকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় জমি বাড়ির দালাল আবদুল সইফুল মণ্ডলের। তাদের ডেরার কাছেই বাড়ি সইফুলের। সে জালিয়াতদের বাইপাসের কাছে আরও দু’টি ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। ওই ফ্ল্যাটে এসে আশ্রয় নেয় অমিত গুপ্তা, সন্দীপ গুপ্তা ও আরও কয়েকজন জালিয়াত। এর মধ্যেই তারা কলকাতায় বসে জোগাড় করে নেয় এটিএম জালিয়াতির জন্য ডিভাইস বা ব্ল্যাক বক্স। কিন্তু প্রথমেই তারা কলকাতায় কোনও অপরাধ ঘটায়নি। তার বদলে ট্রেন ও বিমানে করে চলে যায় দিল্লিতে। আগেই তারা টার্গেট করে রেখেছিল কয়েকটি বিশেষ বেসরকারি ব্যাংকের পুরনো এটিএম। দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও ফরিদাবাদে পর পর এটিএমে তারা হানা দেয়। ব্ল্যাক বক্স বসিয়ে সার্ভারের সঙ্গে এটিএমের সংযোগ ছিন্ন করে তারা তুলে নিতে থাকে টাকা। এর পর তারা ফের চলে আসে কলকাতায় তাদের ডেরায়।

জানা গিয়েছে, শহরে জালিয়াতির আগে মনোজ ও ওয়াকিল কলকাতার শাগরেদ সইফুলকে তাদের ‘মোডাস অপারেন্ডি’ সম্পর্কে জানায়। তার অ্যাকাউন্টও ভাড়া চায় তারা। দেড় লক্ষ টাকার লোভে এতে রাজি হয়ে যায় সইফুল। তার পরিচিত কসবার মোবাইলের ব্যবসায়ী বিশ্বদীপ রাউত ও আরও কয়েকজনকে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার টোপ দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিতেও রাজি করায় সে। যে ধরনের এটিএমে হানা দেওয়া হবে, সেই যন্ত্রের ছবিও সইফুলকে দেয় মনোজ ও ওয়াকিল। সেইমতো শহর ঘুরে সইফুল ওই এটিএমগুলির খোঁজ করে তাদের জানায়। উত্তর কলকাতার চিৎপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, যাদবপুর-সহ দশটি ও উত্তর শহরতলির নারায়ণপুরে একটি এটিএমে হানা দিয়ে তারা প্রায় আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতি করে। বিধাননগর পুলিশের হাতে ধৃত মহম্মদ ওয়াকিলকে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে। দিল্লির জালিয়াতদের জাল কতটা বিস্তার হয়েছে, সেই তথ্য জানতে তাদের টানা জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: ‘দড়ি ছিঁড়ে বেরনো গরুকে খুঁটিতে বাঁধা হল’, মুকুল রায়ের ঘরে ফেরা নিয়ে মন্তব্য অনুব্রতর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement