শুভঙ্কর বসু: ইউ ফর আগলি কাণ্ডে শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করেছিল শিক্ষা দপ্তর। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বর্ণবৈষম্যের ধারণা তৈরীর অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। সেই বরখাস্তের নির্দেশ খারিজ করে শিক্ষিকাকে চাকরি ফিরিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)।
ইউ অক্ষরের প্রেক্ষিতে ‘আগলি’ বা কুৎসিত শব্দের অর্থ বোঝাতে ইংরেজি বইতে ব্যবহার করা হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তির ছবি। পূর্ব বর্ধমানের মিউনিসিপ্যাল বালিকা বিদ্যালয়ের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। মার্কিন মুলুকে বর্ণবৈষম্যের শিকার জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে এই অভিযোগে বইটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরাও। গুরুত্ব বুঝে তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিক-সহ আরেক শিক্ষিকা বর্ণালী ঘোষকে বরখাস্ত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পৃথক পৃথকভাবে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শ্রাবণী মল্লিক ও বর্ণালী ঘোষ।
[আরও পড়ুন: ক্ষমতার লোভে মমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বিমল গুরুং, কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের]
শিক্ষা পর্ষদের ওই বরখাস্তের নোটিস খারিজ করে বর্ণালী ঘোষকে বিষয়টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। মামলার শুনানিতে বর্ণালী দেবীর আইনজীবী গার্গী গোস্বামী দাবি করেন, ওই বইটি পড়ানোর জন্য বর্ণালী কোনভাবেই সুপারিশ করেননি। এজন্য তাঁকে দায়ী করা যেতে পারে না। ফলত পর্ষদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের ৪(১৭) নম্বর রুলের অবমাননা হয়েছে এমনটা বলা যায় না। রাজ্য অবশ্য দাবি করে ওই বইটি সুপারিশের ক্ষেত্রে বর্ণালী ঘোষেরও ভূমিকা রয়েছে। তিনিও পর্ষদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের ৪(১৭) নম্বর রুলের অবমাননা করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বর্ণবৈষম্যের ধারণা তৈরীর অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় রায়ে জানিয়েছেন, বইটি রুমা রায় নামে একজনের লেখা। সেটি প্রকাশিত হয়েছে বাণী প্রকাশনী থেকে। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল বইটি নিষিদ্ধ করা। এক্ষেত্রে বইটি সুপারিশের জন্য বর্ণালী ঘোষকে দায়ী করা যায় না। তাই পর্ষদের জারি করা ওই বরখাস্তের নোটিস খারিজ করা হচ্ছে। বাণী প্রকাশনীর যে বইটি ওই স্কুলের প্রাক প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পড়ানো হচ্ছিল সেটি বিতর্ক তৈরি হওয়ার পরই বাতিল করা হয়।