ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: মাঠ ভরানো ব্রিগেডের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে 'চুরিবিদ্যা'র আশ্রয় নিল সিপিএম! প্রচারের রিলসে লজ্জাজনকভাবে এসইউসি-র ভরা মাঠের ছবি দেখানো হল। এছাড়া সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়কার একটি ছবিও সিপিএমের রিলসে দেখা গিয়েছে, যা আদতে লাল পার্টির নয়ই, তা এসইউসি-র। গত ৫ আগস্ট দলের বাৎসরিক সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ। বামেদের আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার নিয়ে তৈরি রিলস শুরু হয়েছে সেই ছবিটি দিয়ে! যা নিয়ে ছিছিক্কার পড়ে গিয়েছে বামফ্রন্টের মধ্যেই।

এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সিপিএমের রিলসে।
মঙ্গলবার সিপিএমের বানানো ভুলে ভরা ওই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে এসইউসি। তারাই ধরিয়ে দিয়েছে ভুলগুলি। প্রথমত, কমরেড প্রভাস ঘোষের বক্তব্য রাখার ছবি, দ্বিতীয়ত সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় জমিরক্ষা কমিটির ছবি। একইসঙ্গে সন্দেশখালি কাণ্ডে বিতর্কিত নিরাপদ সর্দারকেও ভিডিওর একটি চরিত্র করে তুলেছে সিপিএম। তাই নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সিপিএমের এই ছবি চুরির প্রধান কারণ, পার্টির শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর শাখার সাংগঠনিক অবস্থা এখন তলানিতে। অথচ দলের এই তিন সংগঠনের ডাকেই মূলত ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মহিলাদের এই প্রতিরোধের ছবি আসলে এসইউসি-র।
কিন্তু বাস্তব বলছে, শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর সংগঠনের উপর ভরসা করলে ব্রিগেডের ২৫ শতাংশও ভরবে না। তাই ব্রিগেড ভরাতে জমায়েতের কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে পার্টির জেলা কমিটিগুলিকে। শাখা থেকে এরিয়া কমিটিকে বাস ভাড়া করতে বলা হয়েছে। সমস্ত পার্টি সদস্যের ব্রিগেডে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গে পার্টির সংগঠনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকেই জমায়েত বেশি করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি পার্টির ছাত্র ও যুব সংগঠন, এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআইকেও বলা হয়েছে সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে জমায়েত করতে হবে। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এবারের ব্রিগেড।
ফলে ব্রিগেডে জমায়েত যদি আশানুরূপ না হয় তা হলে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই জমায়েত নিয়ে চিন্তায় থাকা আলিমুদ্দিন জেলাভিত্তিক সমর্থক জমায়েত করার টার্গেট বেঁধে দিয়েছে। কারণ, এই ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে যেনতেন প্রকারে শক্তি দেখাতে চাইছে শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম। তাই 'প্রেস্টিজ'-এর ব্রিগেড সমাবেশ সিপিএমকে এখন ছবি চুরি করতে চলেছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে সিপিএমের ব্রিগেডে উল্লেখযোগ্য ভিড় হয়েছে। বাংলা থেকে পার্টি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও ভিড় হয়েছে ব্রিগেডের মাঠে। গত বছর যুবদের ইনসাফ সমাবেশেও ভিড় হয়েছিল। কিন্তু ভোট বাক্স ফাঁকাই থেকেছে। আর এবার সরাসরি পার্টির ডাকে ব্রিগেড নয়। তার উপর সিপিএমের সংগঠনিক অবস্থাও তথৈবচ। ২০ এপ্রিল ব্রিগেডের সমাবেশের বক্তা তালিকায় রয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছাড়াও অনাদি সাহু, নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু, অমল হালদার ও সুখরঞ্জন দে প্রমুখ পার্টির শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের নেতারা। কিন্তু মহম্মদ সেলিম ছাড়া বক্তা তালিকায় আকর্ষণীয় কেউ নেই। মীনাক্ষী সম্ভবত বক্তা তালিকায় রয়েছে।
ব্রিগেড সমাবেশের বক্তা তালিকায় সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার।
জমি থেকে কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনকে ভিত্তি করেই এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল সিপিএম। পার্টি ও নেতারা এসব শ্রেণি থেকে বর্তমানে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আবার সেই পুরনো উৎসে ফিরতে চাইছে সিপিএম। মন পেতে চাইছে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সেই কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুরদের। কিন্তু দলের বর্তমান যা অবস্থা তাতে এই তিন সংগঠনের কর্মী-সমর্থক দিয়ে ব্রিগেডের সিকিভাগও ভরবে না বলে সিপিএমের এক জেলা নেতার বক্তব্য। শুধু তাই নয়, বৈশাখ মাসের প্রবল গরম। তাই অনেকেই রোদ এড়াতে মাঠের ধারে গাছের তলায় ছায়া খুঁজতে চাইবে। কাজেই মাঠ যাতে কোনওভাবে ফাঁকা না দেখায় তাই গোটা পার্টিকেই নামতে হচ্ছে ব্রিগেড ভরাতে।